নিউজ ডেস্ক :
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ গতি কমিয়ে শক্তি বাড়াচ্ছে। যার ফলে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অশনির গতি উঠছে ১১৭ কিলোমিটারে। গত ৬ ঘণ্টায় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসার গতি কমিয়ে স্থির অবস্থায় থেকে আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে অশনি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সর্বশেষ বুলেটিন-৬ এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সন্ধ্যার আপডেটে বুলেটিন-৬ এ বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝাড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
বুলেটিন-৬ এ জানানো হয়, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় অশনি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (অক্ষাংশ : ১২.১ ডিগ্রি উত্তর, দ্রাঘিমাংশ : ৮৮.৩ ডিগ্রি পূর্ব) অবস্থান করছে।
বুলেটিন-৬ থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এদিকে ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টায় এই ঘূর্ণিঝড় পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হবে। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এর ফলে মঙ্গলবার থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি এবং ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই মুহূর্তে বিশাখাপত্তনম থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে অশনি। অন্যদিকে উড়িষ্যার পুরী থেকে ১০২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়।
উপকূলের আরো কাছাকাছি আসলে প্রভাব পড়বে বাংলাতে। এর প্রভাবে উড়িষ্যা ও বাংলার উপকূলের জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। দক্ষিণবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় হালকা ঝড়ো হাওয়া এবং ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে। বাকি জেলাতেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা।
সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে মৎস্যজীবীদের সমুদ্র থেকে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যেতে বলা হয়েছে। একইভাবে দীঘা ও মন্দারমনি সমুদ্র তটে পর্যটকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা থাকছে। আপাতত এই সময় পর্যন্ত সমস্ত ধরনের বিনোদন কার্যকলাপ সমুদ্রতটে নিষিদ্ধ।
তবে স্থলভাগের ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আশঙ্কা কম। যদিও শুকনো খাবার থেকে পানি মজুদ রাখার মতো সমস্ত সর্তকতা রাখা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি রুখতে প্রতিটি ব্লকে সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। তৈরি থাকছে কুইক রেসপন্স টিম, দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস। দুর্বল ও কাঁচা ঘরবাড়িগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কা করে উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ওইসব মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে রাখার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য তৈরি করা হয়েছে শেল্টার হোম।
Leave a Reply