লাইফস্টাইলডেস্কঃ মজাদার কাজু বাদাম উচ্চ প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
বিভিন্ন গবেষণার বরাত দিয়ে ‘ইট দিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে কাজুবাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হল।
ওজন কমাতে পারে: ওজন কমাতে চাইলে কাজু বাদাম খাওয়া যেতে পারে, এটা কম ক্যালরি ও উচ্চ চর্বি-জাতীয় খাবার।
২০১৭ সালে ব্রাজিলের গোইআইস ফেডারেল ইউনিভার্সিটি’র ‘ক্লিনিকাল অ্যান্ড স্পোর্টস নিউট্রিশন রিসার্চ ল্যাবরেটরি’র ‘ফ্যাকাল্টি অফ নিউট্রিশন’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বাদাম খান তাদের ওজন অন্যদের তুলনায় নিয়ন্ত্রিত থাকে। এটা প্রোটিন, আঁশ ও চর্বির ভালো উৎস হওয়ায় পেট ভরা রাখে ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
কাজু অতি সুস্বাদ হলেও এতে অন্যান্য বাদামের তুলনায় চর্বি ও ক্যালরি কিছুটা কম। এক পরিবেশন কাজু বাদামে গড়ে ১৩৭ ক্যালরি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেল্টসভল হিউম্যান নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টার’য়ের ২০১৯ সালের করা গবেষণার ফলাফল বলে, মানব দেহ এই ক্যালরির ৮৪ শতাংশ পর্যন্ত শোষণ করতে পারে। কারণ এর বাকিটা বাদামের ত্বকেই আটকে থাকে।
রক্ত চাপ হ্রাস পেতে পারে: আমেরিকার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। ২০১৯ সালের ‘কারেন্ট ডেভেলপমেন্টস ইন নিউট্রিশন’য়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, কাজু বাদাম খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হৃদরোগ ইত্যাদি সৃষ্টিকারী চর্বি ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’য়ের মাত্রা কমাতে কাজু বাদাম সহায়তা করে।
তবে, লবণযুক্ত কাজুবাদাম না খাওয়া ভালো, এতে রক্তচাপ বাড়ে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত হতে পারে: দুই ধরনের কোলেস্টেরলের মধ্যে রয়েছে ‘এলডিএল’ ও ‘এইচডিএল’। এলডিএল, ধমনীতে ক্ষতিকারক চর্বি জমাট বাঁধায় এবং এইচডিএল এই ক্ষতিকারক চর্বি এলডিএলকে যকৃতের দিকে বহন করতে সাহায্য করে।
আদর্শগতভাবে, এলডিএল’য়ের মাত্রা কম আর ‘এইডিএল’য়ের মাত্রা বেশি থাকা দরকার। আর এখানেই কাজু বাদাম কার্যকর হতে পারে।
২০১৭ সালে ‘আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যআল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, কাজু বাদাম খাওয়া খারাপ কোলেস্টেরল ‘এলডিএল’য়ের মাত্রা কমায়।
শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে ‘জার্নাল অব নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী কাজুবাদাম সমৃদ্ধ খাবার ভালো কোলেস্টেরল ‘এইচডিএল’য়ের মাত্রা বাড়াতেও সহায়তা করে।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে: ২০০৭ সালে, ‘ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশন’ইয়ে প্রকাশিত পর্যালোচনা থেকে দেখা গেছে, সপ্তাহে চারবারের বেশি কাজুবাদাম খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত কমায়।
২০১৮ সালের ‘জার্নাল অব নিউট্রিশন’য়ের করা সমীক্ষা থেকে জানা যায়, টানা ১২ সপ্তাহ লবণ ছাড়া ৩০ গ্রাম কাঁচা কাজু বাদাম খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও, এটা হৃদরোগ, রক্তচাপ কমাতে এবং ‘এইচডিএল’য়ের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে।
কাজু বাদাম মনোআনস্যাচুরেইটেড এবং পলিআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস হওয়াতে লডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ: ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস থাকলে খাবারে কাজু বাদাম যোগ করা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২০০৯ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম’য়ে প্রকাশিত সমীক্ষা থেকে জানা যায়, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে যারা নিয়মিত কাজু বাদাম থেকে ১০ শতাংশ ক্যালরি গ্রহণ করেন তাদের ইন্সুলিনের মাত্রা অন্যদের তুলনায় কম ছিল। এতে থাকা আঁশ শর্করার মাত্রা বাড়ায় ধীরে রক্তে গ্লুকোজ নিঃসরণ করে।
স্বাস্থ্যকর কপার পাওয়া যায়: শরীর সুস্থ রাখতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, লোহিত রক্ত কণিকা বাড়াতে, হাড় মজবুত করতে এবং সংযোজক টিস্যু সুস্থ রাখার পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
কোষের ক্ষয় রোধ: বাদাম ও বীজ উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘ফ্রি র্যাডিকেল’য়ের কারণে হওয়া দেহের ক্ষতি কমায়।
কাজু বাদাম পলিফেনল ও ক্যারোটিনয়েড আন্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস। কাচার তুলনায় ভাজা বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে।
Leave a Reply