মানুষ সামাজিক প্রাণী। তাই জীবনে চলার পথে প্রতিটি মানুষেরই অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে বন্ধু নামের বিশ্বাসী ও মজবুত একটি সম্পর্কের সৃষ্টি হয়ে যায়। যার কাছে মনের সব লুকানো কথা আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে খুলে বলা যায়। আত্মার সঙ্গে আত্মার শক্তিশালী বন্ধন হলো, বন্ধু।
বন্ধুত্ব মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কখনো কখনো এই বন্ধুত্ব হতে পারে মানুষের সফলতার সোপান, আবার কখনো কখনো বন্ধু নির্বাচনে ভুল করার কারণে এই বন্ধুত্বই হতে পারে চরম ব্যর্থতার কারণ। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় কতক লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে এমন কতক লোকও আছে যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী। সেই লোকের জন্য সুসংবাদ, যার দুই হাতে আল্লাহ কল্যাণের চাবি রেখেছেন এবং সেই লোকের জন্য ধ্বংস, যার দুই হাতে আল্লাহ অকল্যাণের চাবি রেখেছেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৭)
অতএব, বন্ধু নির্বাচনে সব সময় এমন মানুষকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যে কল্যাণের পথ দেখাবে। এবং অকল্যাণের পথ থেকে বন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। পক্ষান্তরে এমন লোকদের বন্ধু তালিকা থেকে দূরে রাখা উচিত, যারা বন্ধুকে অকল্যাণের পথে ঠেলে দেবে। তাঁর দুনিয়া-আখিরাত ধ্বংসের কারণ হবে। কারণ আত্মার সঙ্গে আত্মার বন্ধুত্ব কল্যাণকর; কিন্তু প্রেতাত্মার সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক ভয়ংকর। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৩)
যেহেতু বন্ধুত্ব ও বন্ধুদের আচার-আচারণ মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই যে বন্ধু সর্বদা আল্লাহর কথা স্মরণ করাবে, কখনো বিপথগামী হতে গেলে সে তার বন্ধুকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সতর্ক করবে, সে ধরনের বন্ধু নির্বাচন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আবু মুসা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ মিসক বিক্রেতা ও কর্মকারের হাঁপরের মতো। আতর বিক্রেতাদের থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসবে না। হয় তুমি আতর খরিদ করবে, না হয় তার সুঘ্রাণ পাবে। আর কর্মকারের হাঁপর হয় তোমার ঘর অথবা তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে, না হয় তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২১০১)। বন্ধু নির্বাচনে কোন ধরনের মানুষকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, সে ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিন পুরুষ এবং মুমিনা নারীরা একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন-যাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী।’ (সুরা : আত তওবা, আয়াত : ৭১)
যারা মহান আল্লাহর দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধু নির্বাচন করবে না এবং বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ঈমানহারা হবে, কিয়ামতের দিন তাদের আপসোসের সীমা থাকবে না। কিন্তু সেদিন তাদের কিছুই করার থাকবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজের দুহাত কামড়াতে কামড়াতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসুলের সঙ্গে সৎপথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার, আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ২৭-২৯)
তাই প্রতিটি মানুষের উচিত, বন্ধু নির্বাচনে এমন লোকদের প্রাধান্য দেওয়া, যাদের মধ্যে মহান আল্লাহ কল্যাণ রেখেছেন। মহান আল্লাহ সবাইকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন।
Leave a Reply