ইসলামি শরিয়তে মুসলমানের জন্য দুটি নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এগুলো হলো হালাল বা বৈধ এবং হারাম বা অবৈধ কিংবা নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহতায়ালা বৈধ কাজ গ্রহণ এবং নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। হালালভাবে জীবন নির্বাহকারীর ওপর আল্লাহতায়ালা সন্তুষ্ট হন। হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তির ওপর মহান আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এবং ওই ব্যক্তির আমলনামায় ফেরেশতারা গোনাহ লিখতে থাকে। তবুও কোনো বান্দা যখন চোখের পানি ছেড়ে গোনাহের ক্ষমার জন্য অনুতপ্ত হয়ে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তখন তার বান্দার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেন। আল্লাহতায়ালার একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে তিনি রাহিম তথা দয়ালু। যেমন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ সুরা আলে ইমরান : ৩১
এভাবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অসংখ্যবার মহান আল্লাহর বিশেষ দুটি গুণ তথা দয়া ও ক্ষমার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি সুরা আরাফের ৫৬ নম্বর আয়াতের শেষাংশে আল্লাহতায়ালা রহমত শব্দের সঙ্গে দূর কিংবা দূরবর্তী শব্দ ব্যবহার না করে বান্দাদের প্রতি সুসংবাদ দিয়ে কারিব (সন্নিকটে, নিকটবর্তী) শব্দ উল্লেখ করেছেন। এতে সহজেই প্রতীয়মান হয়, বান্দা যদি সর্ব প্রকার গোনাহের কাজ থেকে বিরত থেকে সর্বদা এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত-বন্দেগি ও ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং ব্যক্তি জীবনে রবের নির্দেশিত পথে চলে, তবেই ওই বান্দা মহান পালনকর্তার রহমতের নিকটবর্তী হতে এবং রহমত লাভ করতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া আল্লাহতায়ালার কাছে কীভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে এ সম্পর্কেও পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার রব! নিশ্চয়ই আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ সুরা কাসাস : ১৬
কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব।’ সুরা আরাফ : ২৩
এভাবে একান্ত ও একনিষ্ঠ প্রার্থনায় আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে পবিত্র কোরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। হাদিসেও হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশ কিছু দোয়া ও আমলের কথা উল্লেখ করেছেন, যা পাঠের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর ক্ষমা অর্জনে সক্ষম হবে। যেমন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশ’ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি বলবে তার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’ সহিহ্ বোখারি : ৬৪০৫
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের শেষে তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ তথা আল্লাহর তাসবিহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করবে, তেত্রিশবার আলহামদুলিল্লাহ তথা আল্লাহর তাহমিদ বা প্রশংসা করবে এবং তেত্রিশবার আল্লাহু আকবার তথা তাকবির বা আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনা করবে, আর এভাবে নিরানব্বই বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন্ কাদির’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। তিনি একক ও তার কোনো অংশীদার নেই। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনিই। সমস্ত প্রশংসা তারই প্রাপ্য। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম। তাহলে তার গোনাহগুলো সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ সহিহ্ মুসলিম : ১২৩৯
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালের অর্থাৎ ফজরের নামাজের পর একশ’ বার সুবহানাল্লাহ এবং একশ’ বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমান হয়।’ নাসায়ি : ১৩৫৪
বর্ণিত হাদিসসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয়, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতের জন্য মুখে উচ্চারণ খুবই সহজ ও সময় কম ব্যয় হয় এমন অনেক আমলের কথা বর্ণনা করেছেন। এসব আমল বাস্তবায়নের মাধ্যমে যেকোনো বান্দা নিজেকে আল্লাহর প্রিয় হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম। অন্যদিকে হাদিসে এটাও বলা হয়েছে, কোনো বান্দা গোনাহ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা ক্ষমার দরজা উন্মুক্ত। তাই একজন মুসলিম হিসেবে নিজে এসব আমলের পাশাপাশি অন্যদের আমলগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে জানানো কর্তব্য, এটাও সওয়াবের কাজ। আল্লাহতায়ালা সৎকাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা সৎকাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো।’ সুরা বাকারা : ১৪৮
সুতরাং সবার উচিত ইসলামি বিধি-বিধান পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকা, গোনাহ থেকে বিরত থাকা এবং কোরআন ও হাদিস নিয়মিত পাঠ করা, অন্যকে অধ্যয়নে উৎসাহিত করা।
Leave a Reply