বিনোদন ডেস্কঃদেশের প্রখ্যাত নাট্যজন সৈয়দ জামিল আহমেদ। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত থিয়েটার প্রযোজনার মধ্যে তার একাধিক কাজ রয়েছে। বিশেষ করে ‘রিজওয়ান’-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর তিনি সর্বাধিক দর্শকের কাছে পৌঁছে গেছেন। শুধু সাধারণ দর্শকই নয়, তার কাজের প্রতি অনুরাগ ও সম্মান জন্মেছে শোবিজ তারকাদের মধ্যেও। ইদানীং প্রায়ই শোনা যায়, এ প্রজন্মের শোবিজ তারকারা কিছু শিখতে চায় না। শর্টকাটে তারকাখ্যাতি আর অর্থের পেছনে ছুটছে তারা ইত্যাদি কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি ঘটনা সবার মধ্যে তরুণ প্রজন্ম নিয়ে ইতিবাচক ভাবনার জন্ম দিতে পারে। তা হলো, তরুণ প্রজন্মের একঝাঁক প্রতিষ্ঠিত তারকা জামিল আহমেদের থিয়েটারভিত্তিক কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। তারা হলেন মৌটুসী বিশ^াস, আশনা হাবিব ভাবনা, সাবিলা নূর, ইয়াশ রোহান, নাযিফা তুষি, শর্মিমালা, কাজী নওশাবা আহমেদ, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ শিরিন শিলা, কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ঘুরে আসা নির্মাতা আরিফ বিজন, অ্যাপেল বক্স প্রোডাকশনের পরিচালক রাকা প্রমুখ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা অকপটে জানিয়েছেন, কীভাবে এই কর্মশালা তাদের মানসিক পরিবর্তনে সহায়তা করেছে। কীভাবে তারা অভিনয় শেখার প্রক্রিয়ায় ঢুকতে পেরেছেন। জামিল আহমেদের কর্মশালার কোর মেম্বারদের অন্যতম মোহসীনা আক্তার বলেন, ‘আমি স্যারের শিক্ষার্থী। কয়েক বছর ধরে তার সঙ্গে কাজ করছি। বিশেষ করে তার কর্মশালা শুরু হয়েছে তিন বছর হলো। কিন্তু সর্বশেষ দুটি কর্মশালায় শোবিজ তারকাদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের তারকাদের অংশ নিতে দেখে ভালো লেগেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কর্মশালা নিয়মিত চলবে। এজন্য যে একেবারে অভিজ্ঞ হতে হবে তা নয়। মূলত যাদের শেখার আগ্রহ আছে তারাই আসবেন। শুধু অভিনয় নয়, লাইট, সেট, কস্টিউম, প্রপসসবকিছু নিয়েই আমরা একের পর এক কর্মশালা করাব। কারণ দেশে এসব শেখার সুযোগ সবার জন্য অত সহজ নয়। আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম শেখার মাধ্যমে যেন তাদের কাজের মান উন্নত করতে পারে।’
সর্বশেষ দুটি কর্মশালার প্রথমটিতে অংশ নিয়েছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ^াস। তিনি বলেন, ‘জামিল স্যারের কথা অনেক আগে থেকেই শুনছি। কিন্তু তার রিজওয়ান, জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, মন্ত্রাস নাটকগুলো দেখার পর তার কাছে শেখার আগ্রহ গভীর হয়। এর মধ্যে পরিচয় হয় স্যারের শিক্ষার্থী মোহসীনার সঙ্গে। তার মাধ্যমেই জানতে পারি স্যার অভিনয়ের কর্মশালা করাবেন। ব্যস আমি কিছু না ভেবেই আবেদন করি। সপ্তাহে চার ঘণ্টা করে কর্মশালা হয়েছে। আমি বেশ নার্ভাস ছিলাম। প্রথম দিন তো বিশ^াসই করতে পারছিলাম না স্যার আমার এত কাছে।’ এত বছরের অভিনয় ক্যারিয়ার। তারপরও নতুন করে কর্মশালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি হাতে-কলমে কখনো শিখিনি। ক্যামেরার সামনে কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। কিন্তু আন্তর্জাতিকমানের কাজ দেখে মনে হতো, কত কিছু জানি না। বিশেষ করে মেথড অ্যাকটিংয়ের জনক স্তানিসøাভস্কি থেকে শুরু করে লী স্ট্রেসবার্গ, মাইসনার, জুডিস ওয়েসটন, সোনিয়া মুর, স্টেলা অ্যাডলারের অভিনয়সংক্রান্ত বই পড়ে অনেক কিছুই বুঝতাম না। জামিল স্যারের কর্মশালা আমাকে এই সমস্যা সমাধানে অনেক সাহায্য করবে।’
নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে ভাবনা এরই মধ্যে দর্শকের দৃষ্টি কেড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি অভিনয় প্রচ- ভালোবাসি। প্রতিদিনই চেষ্টা করি ভালো অভিনেত্রী হওয়ার। কিন্তু আমি খুব মনমরা ছিলাম এবং প্রথমবার উপলব্ধি করলাম আমার কোনো শক্তি নেই। তারপর জামিল স্যারের অভিনয়বিষয়ক কর্মশালায় নিজেকে যুক্ত করলাম। জীবনের অসাধারণ সাতটি দিন পার করেছি। এই সাত দিনে আমি নিজেকে ফিরে পেয়েছি। অনেক প্রাণশক্তি পেয়েছি। কাজের অনুপ্রেরণা এসেছে। এই কর্মশালা করতে গিয়ে উপলব্ধি হয়েছে, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয় করে যেতে চাই। আজ থেকে আমি আমার জীবন, কাজ নিয়ে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, মনোযোগী।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো অভিনয় স্কুল, কর্মশালা, থিয়েটার ক্লাস থেকে কিছু শিখিনি। এই কর্মশালার পর গর্বের সঙ্গে বলছি জামিল আহমেদ আমার গুরু। আমার প্রথম অভিনয়ের শিক্ষক। অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার।’
শর্মিমালা শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। দীর্ঘদিন থিয়েটারে কাজ করেছেন। মাঝে অভিনয় বিরতি থাকলেও আবার ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘জামিল স্যার একজন ইনস্টিটিউট। তার সঙ্গে যতটা সময় থাকা যায় ততই নিজেকে জানা যায়, নিজের কমতিগুলো ধরা পড়ে এবং নতুন কিছু শেখা যায়। তার কর্মশালা আগেও করেছি। এবার করলাম বেসিক অভিনয়ের কর্মশালা। তিনি এর পরবর্তী ধাপ নিয়ে কর্মশালা করালে সেটাও করব। স্যার একটা কথা বলেন, কথা নয় কাজে বিশ^াসী। তার এই কথাটাও যদি কেউ জীবনে প্রয়োগ করে, সেটাই একটা বড় শিক্ষণীয় ব্যাপার। তাই কী শিখলাম মুখে না বলে পরের কাজগুলোতে যদি দর্শক উন্নতি দেখেন তবেই বুঝতে হবে সেটি এই কর্মশালার ফল।’
ছোটপর্দার ব্যস্ত অভিনেত্রী সাবিলা নূর সাত দিন কর্মশালা করতে পারেননি। তবে যে কদিন করেছেন তাতে তার উপলব্ধি হলো, ‘আসলে শেখার তো শেষ নেই। আর সেই শেখাটা যদি এমন একজন মানুষের কাছে হয়, তিনি তার ক্ষেত্রে অনন্য। আমি যে কাজগুলো ক্যামেরার সামনে করি, সেটা কতটা সঠিক, আরও কী ইনপুট দিতে হবে এর একটা বেসিক ধারণা পেয়েছি এই কর্মশালা থেকে।’
কর্মশালার কোর মেম্বারের আরেক সদস্য সোহেল রানা বলেন, ‘শোবিজ তারকারা যেমন এসেছেন তেমনি থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত বা একেবারেই জড়িত নয় এমন লোকও ছিলেন। তারা তারকা বলে ডেডিকেশনের কোনো অভাব দেখিনি। থিয়েটারের লোকেরা হয়ত কিছু শারীরিক চর্চা সম্পর্কে আগে জানত আর তারা জানত নাএটুকুই পার্থক্য।’
Leave a Reply