নিউজ ডেস্কঃ আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২২) বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণের আর মাত্র ১২০ দিন বাকি। নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার জন্য ৩০ আগস্ট পর্যন্ত একটি আদেশও দিতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বই মুদ্রণকারী কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিও স্বাক্ষর করতে পারেনি। প্রাথমিকের ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির বই ছাপার জন্য মুদ্রণকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শুরু হলেও ‘উদ্দেশ্যমূলক টেন্ডারের শর্ত লংঘন ও বিধিমতো সংশোধন’ করার অভিযোগে এবং ‘সংশোধনী বাতিল’ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করায় সেটিও ঝুলে গেছে। আগামীকাল ওই রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, প্রাক-প্রাথমিক এবং ১ম ও ২য় শ্রেণি, ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বিনামূল্যের বই ছাপার প্রক্রিয়া শুরু হলেও ছাপার আদেশ দেওয়া বা মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর পর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি এনসিটিবি। এ বইগুলোর কোনো কোনোটির অনুমোদনও পাওয়া যায়নি মন্ত্রণালয় থেকে। ফলে এনসিটিবি বই ছাপার আদেশ দিতে পারেনি। এ কারণে আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রি-প্রাইমারি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন ও মানসম্মত বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, মাত্র ১২০ দিনে সাড়ে ৩৫ কোটি বই ছাপা-বাঁধাই এবং স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বিতরণ প্রায় অসম্ভব।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপার জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ২৪ কোটি ৮০ লাখ ৫৯ হাজার এবং প্রাথমিক স্তরের ১০ কোটি ২৫ লাখ বই ছাপার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সেটি প্রায় থমকে আছে। প্রতি বছর এ সময়ের মধ্যে কোনো কোনো স্তরের বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও এবার বই ছাপার জন্য মেশিনই চালু হয়নি এখন পর্যন্ত।
জানা গেছে, এবার মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপা হবে ২৮০টি লটে। এর মধ্যে ২০৮ লটের জন্য আলাদা দরপত্র দেওয়া হয়। অন্যদিকে প্রাথমিকের বই ছাপা হবে মোট ৯৮টি লটে। এর মধ্যে ৫২টি লটের দরপত্র প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হলেও টেন্ডারের শর্ত বিধিমতো সংশোধন না করেই একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫২টি এককভাবে দেওয়ার ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। সংক্ষুব্ধ মুদ্রণকারীরা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবিতে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ প্রতিকার না পেয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
নানা অভিযোগ ও উচ্চ আদালতের রিট সম্পর্কে জানতে চাইলে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেছেন, ‘কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে গেলে, আমাদের কিছুই করার থাকে না। আদালতের ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই। প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য দেবেন অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস। আমরা টেন্ডারের শর্তানুসারে কাজ করছি, আইন ও বিধি অনুসরণ করেই সব কিছু করা হচ্ছে। কিছু অভিযোগ মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে।’
বই ছাপার কাজে বিলম্ব সম্পর্কে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ বলেন, ‘কিছু বইয়ের অনুমোদন না পাওয়া এবং সর্বশেষ করোনার ঢেউ সব কিছুকেই তো ওলটপালট করে দিয়েছে। এরপরও সময়মতো বই দেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। সময় কম প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে কাজ আদায় করে নেওয়া এবং বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া।’
একটি সূত্র জানায়, এনসিটিবি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে টেন্ডারের শর্ত লংঘন, অসময়ে টেন্ডারের শর্ত সংশোধন, ‘কালো তালিকাভুক্ত’ প্রতিষ্ঠানকে ভিন্ন নামে কাজ দেওয়া, স্ট্যাম্পে মুচলেকা সাপেক্ষে কালো তালিকার প্রতিষ্ঠানটিকে সতর্ক করে আগামী বছরের ছাপার কাজ দেওয়াসহ নানা-অনিয়মের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)কে দেওয়া হয়েছে।
মুদ্রণকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সিন্ডিকেট করে কাজ বাগিয়ে নিয়ে নিম্নমানের বই সরবরাহ, সময়মতো বই সরবরাহ না দেওয়া, সরকারের দেওয়া মানসম্পন্ন কাগজ খোলা বাজারে বিক্রি করে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা ও সরবরাহ করা।
এ ব্যাপারে মুদ্রণ শিল্প সমিতির উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ বলেন, হাতেগোনা দু-একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান টেন্ডারের শর্ত নিয়ে ঘাপলা করে থাকে প্রতি বছর। কিন্তু এনসিটিবি তাদের শাস্তির আওতায় আনে না এবং প্রতি বছর নানা অভিযোগের পরও তাদেরই বড় বড় লটের কাজ দিয়ে থাকে। এবারও তাই হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে বই সময়মতো দিচ্ছে না তারা। তিনি জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষের বই আগস্ট মাসে দেওয়া প্রতিষ্ঠানকে এবার সবচেয়ে বড় লটের কাজ দিতে চাইছে এনসিটিবি। ভূত এনসিটিবিতেই। আগে সেটি সারাতে হবে।
Leave a Reply