নিউজ ডেস্কঃ করোনা সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামলেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। বর্তমানে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় সম্মতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার, টিকাপ্রাপ্তি ও ভারতের সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। টেকনিক্যাল কমিটির সিদ্ধান্ত হবে বিজ্ঞান ভিত্তিক। শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে আসার পাশাপাশি ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে টেকনিক্যাল কমিটি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে নামার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ঠিক হবে না। আগামী অক্টোবর মাসে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে দেশটির গবেষক ও চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। এবার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের অধিক হারে আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে। আর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এর আগে বাংলাদেশে এসেছে, ভবিষ্যতেও আসতে পারে। তাই টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।এদিকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার কথা আবারও জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, দেশে করোনায় সংক্রমণের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তবে খোলা হবে ধাপে ধাপে। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ কমিটির আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বৈশ্বিক সংকটের শুরু থেকে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ব্যাহত না করে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে যেন কাজ করি। আমরা এখন পর্যন্ত সেটাই করছি। তারা যেন পড়াশুনায় পিছিয়ে না যায়, এজন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন, স্কুল খোলার সব প্রস্তুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে আমরা খুলে দিতে পারি।
করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, কীভাবে স্কুল-কলেজ খুলবে সে ব্যাপারেও টেকনিক্যাল কমিটি মতামত দেবে। এক্ষেত্রে টিকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনে প্রচুর টিকা আসছে। টিকা প্রাপ্তি, সংক্রমণের হারসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে টেকনিক্যাল কমিটি পরামর্শ দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, শিশুদের আর কতদিন আটকে রাখা যায়। ঘরে থাকতে থাকতে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগে মেডিক্যাল কলেজ, বুয়েট, এগ্রিকালচার ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের টিকা এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের টিকার আওতায় এনেই প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা যেতে যারে। খোলার পর দুই সপ্তাহ দেখবে, পরিস্থিতি উন্নতি নাকি অবনতি। যদি উন্নতি হয় তাহলে ধাপে ধাপে কলেজ, হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুল খুলে দেওয়া যাবে। বিশ্বের কিছু কিছু দেশে এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল কমিটি কোন মতামত দেয়নি। এ ব্যাপারে টেকনিক্যাল কমিটি মতামত দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, আগামী অক্টোবরে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এবারের ঢেউয়ে টার্গেট হবে শিশুরা। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে দেশের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনা গেলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। তখন ঝুঁকি কম থাকবে। আমাদের দেশে এখনো ১৮ বছরের নিচের মানুষের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই সবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতেই হবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অনেক ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে আগামী কয়েক মাস অপেক্ষা করলে ভালো হয়।
Leave a Reply