নিউজ ডেস্কঃ দেশের সর্ববৃহৎ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের নামকরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করার প্রস্তাব করেছিলেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সদস্যরা। তবে সেই প্রস্তাব নাকচ করে নিজের নামটি কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল মঙ্গলবার একনেক সভায় এ ঘটনা ঘটেছে। সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, সভায় ‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, জামালপুর’ নামে জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব তোলা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প থেকে নিজের নাম কেটে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এখানে আমার নাম থাকবে না।’ তখন সদস্যরা তাঁকে অনেক বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন যে এ দেশের পরিবেশ রক্ষায় সৌরবিদ্যুতের প্রয়োজনে আপনিই উদ্যোগ নিয়েছেন। আপনি এই সেক্টরে লিড দিচ্ছেন। এটা একটা আইকনিক প্রকল্প হবে, তাই এই প্রকল্পটা আপনার নামে হওয়া উচিত।’ তখন প্রধানমন্ত্রী খুব দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘না, এখানে আমার নাম হবে না, আপনারা অবশ্যই এই নাম পরিবর্তন করবেন।”
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “এই নাম বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে অনুমোদিত বলে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব।’ পরে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের নাম ‘সোলার পার্ক, মাদারগঞ্জ, জামালপুর’ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।”
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে শেরেবাংলানগরের মন্ত্রিসভা কমিটি পরিষদ (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘শুধু রংপুর কিংবা বরিশাল নয়, পর্যায়ক্রমে সারা দেশে জরাজীর্ণ ও বেইলি সেতু ভেঙে নতুন সেতু করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সংগ্রহের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।’
এম এ মান্নান জানান, দুধকুমার নদ ড্রেজিং ভালোভাবে করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ড্রেজিং করতে হবে।
একনেকে ১০ প্রকল্প অনুমোদন
গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নসহ ১০ প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে একনেক সভায়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ৯৮৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ছয় হাজার ৬৬০ কোটি ২৯ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩৭ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে এক হাজার ৮৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এর মধ্যে প্রায় এক হাজার ৫১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সোলার পার্ক, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প নিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগস্ট ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করা হবে। ৮৬১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘জরাজীর্ণ, অপ্রশস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিদ্যমান বেইলি ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু প্রতিস্থাপন প্রকল্প (রংপুর জোন)’। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ‘বাগেরহাট-রামপাল-মোংলা জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি চলতি বছরের জুলাই থেকে জুন ২০২৪ সালে বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
আর ‘ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মার্চ ২০২৬ সালে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ‘চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং (অতিরিক্ত অর্থায়ন, এলজিইডি অংশ)’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
এ ছাড়া ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রকল্পটি অনুমোদনের পর চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড।
অন্যদিকে ‘দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজ্যুয়াল দলিল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ‘পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প-৩য় পর্যায়’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৯২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে জুন ২০২৫ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)।
৬৯২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করবে ‘কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দুধকুমার নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। উপকূলীয় চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নামের সংশোধিত প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এবার আরো ৫৯ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটিতে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। তবে সংশোধিত প্রকল্পে তা জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে।
Leave a Reply