নিউজ ডেস্কঃ
পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের উন্মুক্ত প্রান্তরে অবস্থান করে অশ্রুভেজা নয়নে মহান আল্লাহর কাছে গোটা জীবনের পাপমুক্তির প্রার্থনা, মহামারি তুলে নেওয়ার আকুতি ও আত্মশুদ্ধির অঙ্গীকারের মাধ্যমে সোমবার (১৯ জুলাই) কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র হজ পালন করেছেন ৬০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
মসজিদে নামিরা ও আরাফাতের পাহাড় ঘেরা জাবালে রহমতের পাদদেশ ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত হয়েছে আবেগাপ্লুত সম্মিলিত কণ্ঠের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নে’মাতা লাকা ওয়াল মুলক লাশারিকা লাক’-তালবিয়ায়। এক অপার্থিব আবহ রচিত হয় পুরো প্রান্তরজুড়ে। সবার পরনে কাফনের কাপড়ের মতো সাদা দুই খণ্ড বস্ত্র। সবারই দীন-হীন বেশ।
দুপুরে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর আরাফাতের ময়দান সংলগ্ন মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেওয়া শুরু করেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। পবিত্র হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য ও সমৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন খতিব। দীর্ঘ লিখিত খুতবায় তিনি সঠিক ইসলামের পথে মুসলিমদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়াও করেছেন।
গতকাল সূর্যাস্ত অবধি তারা আরাফাতের সীমানায় অবস্থান করেন। দুপুরে জোহর ও আসর নামাজ এক আজান ও দুই ইকামাতে কসর করে আদায় করা হয়। হজ খুতবায় শায়খ বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা মহামারি সম্পর্কে মহানবি (সা.)-এর শিক্ষা অনুসরণ করার জন্য সমবেতদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নবি করিম (সা.) লোকদের এমন একটি জায়গায় না যাওয়ার জন্য বলেছিলেন যেখানে মহামারি রয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে দ্বিতীয় দফা হজে আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে শায়খ বান্দার বালিলা বলেন, ‘মহানবি (সা.) বলেছেন, মহামারি যে অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে সেখানকার লোকদের বাইরে যাওয়া উচিত নয় এবং অন্যান্য অঞ্চলের লোকদের উপদ্রুত এলাকায় না যাওয়া উচিত।’ খুতবায় শায়খ বান্দার মুসলমানদেরকে সমতা প্রতিষ্ঠা, একে অপরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করার আহ্বান জানান। তিনি আল্লাহর দোহাই দিয়ে সবাইকে একে অপরকে ক্ষমা করতে বলেছেন। তিনি বলেন যে, হজ হলো ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ এবং যারা হজে আসতে সক্ষম তাদের এটি সম্পন্ন করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আহ্বান জানিয়েছেন।
মসজিদে নামিরা থেকে বাংলাদেশ সময় ৩টা ৩০ মিনিটে খুতবা শুরু করেন তিনি। প্রায় ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা মূল খুতবা আরবিতে দেওয়া হয়, তবে আরো ৯ ভাষায় (সংক্ষিপ্ত পরিসরে) অনুবাদ করা হয় তা, এর মধ্যে ছিল বাংলাও। খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে।
শুধু সৌদি নাগরিক ও সৌদিতে বসবাসরত ১৫০টি দেশের ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সি মাত্র ৬০ হাজার ধর্মপ্রান মানুষ, যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন না, তাদের এ বছর হজের জন্য নির্বাচিত করা হয়। পূর্ববর্তী বছরগুলোতে ২৫ লক্ষাধিক মুসলিম হজযাত্রী উষ্ণ শহর মক্কার অদূরে আরাফাতের তাঁবুতে প্রচণ্ড উত্তাপের মধ্যে একে অপরের কাছাকাছি বসে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে সাদা-সবুজ ছাতা মাথায় দিয়ে হজ পালন করতেন।
Leave a Reply