নিউজ ডেস্কঃ কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ‘কঠোর লকডাউন’ এর প্রথম দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটেও কঠোর ভাবে লকডাউন নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। এজন্য সকাল থেকে প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী যৌথ ভাবে মাঠে তৎপর ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়িতে জনমানবশূণ্য এক অচেনা শহরে পরিণত হয় সিলেট নগরী। জরুরী ও নিত্যপণ্যের কিছু দোকান খোলা থাকলেও মানুষের চলাচল ছিল-না তেমন। ফাঁকা রাস্তায় শুধুমাত্র টহল গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স ও রিক্সা ছাড়া তেমন কোন যানবাহন দেখা যায়নি। জরুরী প্রয়োজনে যারাই বাইরে গেছেন পথে পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। এসময় অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ায় এবং স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ না করায় অনেক ব্যবসায়ী ও পথচারীকে শাস্তি দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। সিলেট নগরীতে লকডাউন নিশ্চিত করতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক টিম কাজ করেছে। এছাড়া, নগরীর প্রবেশ পথে ৮টি এবং নগরীতে ৮টি চেকপোস্ট বসায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। লকডাউন অমান্য করায় ১০৪টি যানবাহন আটক ও ৪৮টি মামলা করে মেট্রোপলিট পুলিশ। যার মধ্যে ২৭টি সিএনজি, ৮৯টি মোটরসাইকেল, ২৫টি প্রাইভেট কার এবং ৩১টি বিভিন্ন ধরণের যানবাহন রয়েছে। এ সময় ২৫ জনকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে, সিলেট নগরীর পাশাপাশি সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের সর্বত্র সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সাথে র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করেন। তাদের সাথে জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে কার্যকর ছিল। উপজেলা গুলোতে রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরীসেবা, পণ্য পরিবাহী যানবাহন ও রিক্সা ছাড়া সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
গতকাল সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন মোড়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। তাদের সাথে ছিলেন সেনাবাহিনী, র্যাব এবং সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া, একাধিক টহল দল পুরো শহরে দিনব্যাপী টহল দেয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুই একজন ঘর থেকে বেরিয়ে আসলে তারা চেকপোস্ট ও মোবাইল টিমের জেরার মুখে পড়েন। যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখালে তাদের যেতে দেয়া হয়।
এ সময় অপ্রয়োজনে বের হওয়ায় অনেককে ফিরিয়ে দেয়া হয়। নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদিনামার্কেট, রিকাবীবাজার, লামাবাজার, শেখঘাট, সুবহানীঘাট, উপশহর, নাইওরপুল, মিরাবাজার, কুমারপাড়া, নয়াসড়ক, শাহী ঈদগাহ, শিবগঞ্জ, টিলাগড় এবং দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা, কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল, কদমতলী, হুমায়ন চত্ত্বরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই অবস্থা দেখা যায়। এ সময় স্বাস্থ্য বিধি না মানায় অনেক রেষ্টুরেন্টসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পথচারী ও যাত্রীকে জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। আবার টহল দলকে দেখে অনেকেই দ্রুত বড় রাস্তা থেকে পাড়ার রাস্তায় সরে পড়েন। কঠোর লকডাউন থাকলেও অনেকে রিক্সায় বেরিয়ে পড়েন, দুই একটি সিএনজি অটোরিক্সাকে মাঝে মাঝে শূণ্য সড়কে আওয়াজ তুলে ছুটে যায়। পাড়ার গলিতে অনেককে দাঁড়িয়ে গল্প করতে দেখা যায়। তবে এ্যাম্বুলেন্স বা কোন অন্য গাড়ির সাইরেনের শব্দ শুনার সাথে সাথে শুরু হয় পলায়ন। সড়কের মোড়ে মোড়ে রিক্সাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেয়া হয়নি। বেলা ১টার দিকে সড়কের মোড় গুলোতে রিক্সা নিয়ে চালকরা ভিড় করলে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে, নিত্য ও জরুরী পণ্যের দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতাদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। মানুষ না আসায় অনেককেই বসে থেকে সময় পার করতে দেখা যায়। তবে, লকডউন সম্পর্কে আগে থেকেই ধারাণা থাকায় এবার নগরীর মানুষ অনেকটাই স্বাভাবিক ছিলেন। বেশির ভাগ মানুষই ঘর থেকে বের হননি এবং ঘরে থাকার জন্য তাদের কোন অস্থিরতাও ছিল না বলে জানান নগরীর অনেক বাসিন্দা। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিস্থিতি গুরুত্ব সম্পর্কে সকলেরই এখন কমবেশি ধারণা রয়েছে বলে জানান তারা। এ সময় তারা বলেন, কঠোর লকডাউনের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।
এদিকে, সিলেট জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল থেকে সহকারী কমিশনার শাম্মা লাবিবা অর্ণব জানান, লকডাউন কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনের ৩৩ ভ্রাম্যমান আদালত সিলেট মহানগরসহ জেলায় কাজ করছে। এসময় লকডাউন অমান্য করায় ১৭২ টি মামলা এবং ২ লক্ষ ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এসএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের জানান, প্রথম দিনে মেট্রোপলিটন পুলিশ ১০৪টি গাড়ি আটক করেছে এবং সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ২৫ জনকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকায় সরকার ১ জুলাই থেকে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন এর সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় সরকার নির্দেশিত নির্দেশনা ব্যাতিরেখে সবাইকে ঘরে অবস্থানের ব্যপারে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply