নিউজ ডেস্কঃ দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হয়েছেন তারা কোনো ব্যাংক, বিমা ও ফিন্যান্স কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো কারণে খেলাপি হলে ওই ঋণ পরিশোধ বা নবায়ন করার দিন থেকে তিন বছর পর্যন্ত তিনি আর পরিচালক হতে পারবেন না ওইসব প্রতিষ্ঠানের।
ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের কঠোর বার্তা দেওয়ার জন্য এমন বিধান করা হচ্ছে। এজন্য সংশোধন করা হচ্ছে তিনটি আইন। এগুলো হচ্ছে-ব্যাংক কোম্পানি আইন,বিমা আইন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন। এসব আইনে এই বিধান যোগ করে একটি নতুন ধারা বা উপধারা যুক্ত করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন এখন সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩ বাতিল করে ফিন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২১ করা হচ্ছে। বিমা আইন সংশোধন করার জন্য খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের শনাক্ত করতে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হচ্ছে। এতে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শনাক্ত করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তালিকা পাঠাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তালিকা আরও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের সহায়তায় চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে পাঠাবে। তালিকা প্রকাশ করার বিধানও রাখা হচ্ছে। তালিকায় কারও নাম উঠলে তিনি আজীবন ওইসব কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন না। আর পরিচালক থাকলে তিনি অপসারিত হবেন। ব্যাংক কোম্পানি আইনের পাশাপাশি এই বিধান ফিন্যান্স কোম্পানি আইনেও যুক্ত করা হচ্ছে। দুই আইনেই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিধি জারি করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধিত খসড়ায় ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শনাক্ত করার বিধান অন্তর্র্ভুক্ত করা হয়েছে।
ফিন্যান্স কোম্পানির আইনে এখনো বিধানটি সংযোজন করা হয়নি। তবে সম্প্রতি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের শনাক্ত করা এবং তাদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধানটি তিনটি আইনেই সংযোজন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত পরিস্থিতির কারণে যারা খেলাপি, তাদের ছাড়া সব ধরনের খেলাপির ক্ষেত্রে কঠোর আইন করা দরকার। একই সঙ্গে আইনের প্রয়োগও করতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা যাতে কোনো প্রতিষ্ঠানেই সুবিধা না পায়, এ ব্যাপারে আইন করা উচিত। শুধু ব্যাংক, বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকই নন, সব ক্ষেত্রেই এটা হওয়া উচিত। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি সরকারি পদক না দেওয়ার বিধান করারও প্রস্তাব করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতে পরিচালকদের নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে। তা না হলে এখানে সুশাসন আসবে না। আর্থিক খাতকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সুশাসনের কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র জানায়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি ওই দুই খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারেন না। পরিচালক থাকা অবস্থায় কেউ খেলাপি হলে তাকে ওই পদ থেকে অপসারণ করার বিধান রয়েছে। তবে খেলাপি হওয়ার পর তা নবায়ন করে তিনি আবার সঙ্গে সঙ্গেই পরিচালক হতে পারেন। এছাড়া পরিচালকের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ব্যাপারে আলাদা কোনো বিধান নেই। তারাও এর আওতায় পড়েন। সংশোধিত আইনে যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসাবে শনাক্ত হবেন, তারা এ সুযোগ পাবেন না। ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হলে তিনি আর কখনোই ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। তবে ইচ্ছাকৃত খেলাপির বাইরে অন্য খেলাপিরা এ সুযোগ পাবেন। তবে তাদেরকে পুনরায় পরিচালক হতে কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। খেলাপি ঋণ নবায়ন করার পর তিন বছর পর্যন্ত তিনি আর পরিচালক হতে পারবেন না।
Leave a Reply