নিউজ ডেস্কঃ দেশে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগী, শনাক্তের হার, মৃত্যু—সবই আবার ক্রমে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত খুব বেশি না হলেও ঈদের পর থেকে সংক্রমণে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ তুলনামূলক বেশি। কিছুদিন ধরে দেশের উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মৃত্যুও বাড়ছে। এই অঞ্চলে সীমান্তবর্তী জেলার সংখ্যা বেশি।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে লকডাউন জোরদার করতে হবে। এসব জেলায় সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা এবং কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং (আক্রান্ত ব্যক্তি যাঁদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা) কার্যক্রম বাড়াতে হবে। যথাযথভাবে রোগী ব্যবস্থাপনা করতে হবে। না হলে পরিস্থিতি আবার গত মার্চ-এপ্রিলের মতো খারাপ আকার নিতে পারে। বিজ্ঞাপন
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এখনো কিছু বিধিনিষেধ জারি আছে। সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় পুরোপুরি বা আংশিক লকডাউন চলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বুঝতে পারার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। এ ছাড়া টানা তিন সপ্তাহ ধরে মৃত্যু ও সংক্রমণ কমতে থাকাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু এই তিনটি সূচকই এখন ঊর্ধ্বমুখী।
গত ১৪ মে দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়। দেশে সংক্রমণের ৬৩তম সপ্তাহে (১৬-২২ মে) মোট পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ৮ শতাংশের কম। এরপর থেকে তা বাড়ছে। গতকাল শনিবার শেষ হওয়া ৬৫তম সপ্তাহে (৩০ মে থেকে ৫ জুন) রোগী শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক দিনে ১১ শতাংশের বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছে, যা সর্বশেষ ৩৯ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।
শনাক্তের হার দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকলেও নতুন রোগীর সংখ্যা অবশ্য বাড়ছে তিন সপ্তাহ ধরে। সংক্রমণের ৬২তম সপ্তাহে (৯-১৫ মে) মোট রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ৬৭২ জন। এরপর প্রতি সপ্তাহে সংখ্যা বেড়েছে। গতকাল শেষ হওয়া সপ্তাহে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন রোগী বেড়েছে ২৩ শতাংশের বেশি।বিজ্ঞাপন
প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে দেখা গেছে, নতুন রোগী বাড়তে শুরু করার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুও বাড়তে থাকে। টানা পাঁচ সপ্তাহ নিম্নমুখী থাকার পর গতকাল শেষ হওয়া সপ্তাহ থেকে মৃত্যুতেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।
বিভাগওয়ারি হিসাবে মৃত্যু বাড়ার হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে। আগের সপ্তাহের তুলনায় রাজশাহীতে মৃত্যু বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে আছে খুলনা বিভাগ, প্রায় ৪২ শতাংশ মৃত্যু বেড়েছে। আর ঢাকা বিভাগে মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে মৃত্যু কমেছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ জন মারা গেছেন রাজশাহীতে। এই সময়ে ঢাকাতেও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সংক্রমণ আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আরও কার্যকর না হয়, ততক্ষণ সংক্রমণ বাড়বে। এখন বিশেষ নজর দিতে হবে সীমান্ত এলাকায়। যাঁরা পাসপোর্ট নিয়ে দেশে আসছেন, তাঁদের ব্যবস্থাপনা মোটামুটি ভালো হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা পাসপোর্ট ছাড়া আসা-যাওয়া করছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কোয়ারেন্টিন হচ্ছে না। এটি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
Leave a Reply