বিনোদন ডেস্কঃ
সুহাসিনী আর মায়াবী চোখের চাহনি- এ দুটোতেই যিনি অনবদ্য তিনি অপি করিম। তার মিষ্টি হাসিতে মুহূর্তেই ব্যাকুল হয়েছে লাখো তরুণ-তরুণী। শুধু হাসি আর চাহনিতেই যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন, তা কিন্তু নয়। সাবলীল অভিনয় আর নিজস্বতায় শোবিজ অঙ্গনে অপি করিম এক অনন্য নাম।
নব্বইয়ের শেষাংশে লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নামের আগে সুপারস্টার তকমা যোগ হলেও সেটার যথার্থ ব্যবহার করেছেন অভিনয়ে। দাপুটে অভিনয়ে নিজের সঙ্গেই করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেই থেকে শুরু, এখনো মিডিয়া-পাড়ায় অভিনয়গুণে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অপি। নব্বই দশকে তার আত্মপ্রকাশ এবং সাফল্য। তাই ওই সময়কার দর্শকদের কাছে অপি এখনো এক সতেজ অনুভূতির নাম।
আজ পহেলা মে, নন্দিত এ তারকার জন্মদিন। ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছোঁয়ার আগে থেকেই সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার, ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন এ তারকা। তবে বিশেষ এই দিনটিকে আজ আর বিশেষ মনে হচ্ছে না তার। কারণ বেশ কিছুদিন আগেই বাবা হারিয়েছেন তিনি। প্রতিটা মুহূর্তেই বাবার কথা মনে পড়ছে। ভীষণ মিস করছেন তাকে।
জন্মদিনের সময় কাটানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জার্নালকে অপি করিম বলেন, ‘ঘরবন্দি জীবন তো, আজকের দিনটা খুব একটা স্পেশাল মনে হচ্ছে না। বরং আজকে প্রতি ওয়াক্তের নামাজ শেষে শুধু আমার পরিবার না, পৃথিবীর সবার জন্য দোয়া করছি। আজকে বাবার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।’
বাবার কথা উঠতেই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন অপি করিম। প্রায় কয়েক মিনিটের মতো স্তব্ধ থাকেন তিনি। মুহূর্তেই যেন গলা ধরে আসছিলো তার। ভারী কণ্ঠে এই সুহাসিনী বলেন, ‘বাবার প্রসঙ্গে কী বলবো, মনে তো পড়ছে প্রতিটা মুহূর্তেই। আর এসময়ে বাবাকে নিয়ে বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘শুটিংয়ের কারণে কিংবা দেশের বাইরে থাকার কারণে অনেক সময়েই বাবা-মাকে ছাড়া জন্মদিন পালন করেছি। পাশে না থাকলেও কিন্ত তারা আমাকে উইশ করেছেন। কিন্ত যখন মনে হয় বাবা আমাকে আর উইশ করবে না তখন মনের ভেতরটাই এক অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করে। এ শূন্যতাটা পূরণ হবার নয়।’
তিনি আরও বলেন, একদিকে আল্লাহ আমার বাবাকে নিয়ে গিয়েছেন, অন্যদিকে আমাকে একটি মেয়ে দিয়েছেন। সন্তানের মা হওয়াটা অবশ্যই আমার জন্য ভীষণ আনন্দের। কিন্ত যখনই মনে হয় যে বাবাকে তো আর দেখতে পাবো না, বাবা বলে ডাকতে পারবো না; তখন কেমন জানি একটা শূন্যতা কাজ করে। এ অনুভূতিগুলো বোঝানোর জন্য এই মুহূর্তে আমি কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। বাবাও আমাকে আর ডাকবে না ‘মা, মা রে…’। বাবা আমাকে অপান্তা বলে ডাকতো সবসময়। এ ডাকটা তো আর কখনো শুনতে পাবো না।
জন্মদিন নিয়ে স্মৃতি জানতে চাইলে অপি করিম বলেন, এখন যদি আমার মেয়ের সঙ্গে আমার বাবাও থাকতো তাহলে হয়তো অনেক স্মৃতি শেয়ার করতে পারতাম। কিন্ত আজকে এমন মুহূর্তে মন সায় দিচ্ছে না। এখন শুধু মনে হচ্ছে কোন কোন জন্মদিনগুলো আমি বাবা ছাড়া পালন করেছি, সেগুলো মনে পড়ছে শুধু।
বেশ কিছুদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন অপি করিমের মা। কিছুদিন আগেই করোনা নেগেটিভ হয়েছেন, হাসপাতাল থেকে বাসায়ও ফিরেছেন। এখন তিনি সুস্থ আছেন।
সবার সুস্থতা কামনা করে ‘ব্যাচেলর’ খ্যাত এ অভিনেত্রী বলেন, আজকে আমি আমার পরিবার, পরিজন ছাড়া দেশবাসী, এমনকি পুরো মানবজাতির জন্য দোয়া করেছি। দ্রুতই যেন এ মহামারি কেটে যায়। যতদিন না এ মহামারি না কাটছে ততদিন যেন আমরা সবাই সবার সঙ্গে মানবিক আচরণ করি। ঘর থেকে অপ্রয়োজনে না বের হই, বের হলেও সবাই যেন মাস্ক পরি- এটাই চাই আমি।
অপি করিম ১৯৯৯ সালে লাক্স ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায় ‘মিস ফটোজেনিক’ খেতাব অর্জন করেন। এরপর তিনি লাক্সের বিজ্ঞাপনে মডেল হন এবং জনপ্রিয়তা পান। মডেলিং দিয়ে শুরু করে অল্প সময়েই নাটক, টেলিফিল্মে পোক্ত জায়গা করে নেন। বহু দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, মঞ্চে অভিনয়, নাচ, সিনেমা এসবেও স্ব-প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন অপি।
অপি করিম অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘শুকতারা’, ‘আপনজন’, ‘সবুজ গ্রাম’, ‘তিথির সুখ’, ‘অক্ষয় কোম্পানির জুতা’, ‘ছায়া চোখ’, ‘জলছাপ’, ‘সাদাআলো সাদাকালো’, ‘যে জীবন ফড়িংয়ের’, ‘উত্তম-সুচিত্রা’, ‘মান-অভিমান’, ‘এ শহর মাধবীলতার না’ ও ‘অবাক ভালোবাসা’ ইত্যাদি।
অপি করিম ‘ব্যাচেলর’ সিনেমায় অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত এই সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এরপর ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন অপি। এ ছবির মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও সম্মাননা প্রাপ্তির সঙ্গে প্রশংসিত হয়েছেন।
অভিনয় পেশার বাইরে অপি করিম একজন শিক্ষিকা। তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর আর্টিকেচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
Leave a Reply