নিউজ ডেস্কঃ বাইরে বিকল্প উৎস থেকে করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ। এই বিকল্প টিকার জোগানদাতা দেশ রাশিয়া। গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি দেশে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে অনুমোদিত টিকার সংখ্যা দাঁড়াল দুটি।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পেয়ে বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে রাশিয়ার টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেল।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশে দ্রুতই উৎপাদন শুরু হবে। এ জন্য দু’দেশের সরকারি পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কবে নাগাদ বাংলাদেশে এই টিকার উৎপাদন শুরু হবে, তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে। তবে উৎপাদন শুরুর আগে সরকার রাশিয়া থেকে টিকা কিনবে। আগামী মে মাসের মধ্যে স্পুটনিক-ভি টিকার ৪০ লাখ ডোজ দেশে আসবে। এদিকে, চীনের টিকা পেতেও সরকারিভাবে জোরালো চেষ্টা চলছে। এ জন্য চীনের নেতৃত্বে একটি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার বিকল্প হিসেবে রাশিয়া ও চীনের টিকা দিয়ে চাহিদা পূরণের পথে হাঁটছে সরকার। তাদের অভিমত, সরকার টিকা পেতে সব উৎস খোলা রাখতে চায়। এ জন্য অক্সফোর্ড, চীন ও রাশিয়ার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি টিকা পেতেও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের টিকা তিনটির সংরক্ষণ সুবিধা কম থাকলেও স্বল্প পরিমাণে হলেও ওই টিকা নিতে চায় সরকার। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার এক লাখ ডোজ আসার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের উদ্যোগ প্রমাণ করে, একটি কিংবা দুটি উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা নয়, টিকা সংগ্রহে সব পথ খোলা থাকবে। অর্থাৎ গুণগত মানসম্পন্ন টিকা হলে তা সংগ্রহে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। দেশে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কবে নাগাদ দেশে রাশিয়ার টিকা উৎপাদন করা হবে, আগামী দুই সপ্তাহ পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে। তবে উৎপাদনে যাওয়ার আগে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে রাশিয়া থেকে টিকা কেনা হবে।
সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, টিকা পেতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৬০ মিলিয়ন ডোজ টিকা উদ্বৃত্ত আছে। সেই টিকা পাওয়ার জন্যও চেষ্টা করা হচ্ছে।
টিকা পেতে সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ সরকার আগেই নিতে পারত। মহামারির সময় একটি কিংবা দুটি দেশের ওপর নির্ভরশীল থাকা উচিত নয়।
কারণ, সেই দেশগুলোতে সংকট তৈরি হলে তখন তারা জোগান অব্যাহত রাখতে পারবে না। ভারতের ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছে। আগে থেকে সরকারকে চীন ও রাশিয়ার টিকার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার টিকাটি জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে।
তিনি বলেন, এই টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। দ্রুত এই টিকা দেশে উৎপাদনের বিষয়ে চেষ্টা করতে হবে। দেশে তিনটি ওষুধ কোম্পানির টিকা তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে টিকা তৈরি হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্য দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করা যাবে। একই সঙ্গে চীনের টিকাও গ্রহণ করা উচিত। তাহলে টিকা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply