নিউজ ডেস্কঃ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবারও বলেছেন, “আগ্নেয়াস্ত্র সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আর এই সমস্যা বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তিনি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণেতাদের অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।”
একের পর বন্দুক হামলায় আতঙ্কের জায়গা হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপদ। কে কোন সময় বন্দুক নিয়ে চড়াও হবে, এ নিয়ে নাগরিকদের এখন নিত্যই উদ্বেগের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন আগ্নেয়াস্ত্র পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল রাতে ইন্ডিয়ানা রাজ্যের ইন্ডিয়ানাপোলিস শহরে বন্দুকধারীর গুলিতে আটজন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। এক মাসের মধ্যে তিনটি বড় ধরনের পৃথক গুলির ঘটনা ঘটেছে। বন্দুক রাখার সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে মার্কিন সমাজে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। রক্ষণশীলরা আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকারে কোনো ছাড় দিতে চায় না। বন্দুক রাখার অধিকারের পক্ষের সংগঠনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রাজনীতির অন্যতম শীর্ষ তহবিল জোগানদাতা।
ইন্ডিয়ানাপোলিসের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বহুজাতিক পণ্য বিতরণ সেবা প্রতিষ্ঠান ফেডেক্সের কার্যালয়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরদিন পুলিশ বন্দুকধারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে। ফেডেক্সের সাবেক কর্মচারী ১৯ বছর বয়সী ব্র্যান্ডন হোল এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। পরে তিনি নিজেই নিজের বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের কোনো উদ্দেশ্য এখনো খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।
ক্রমাগত হতাশা থেকে এমন হতে পারে। তাৎক্ষণিক তদন্তে জানা গেছে, ব্র্যান্ডন হোলের ঘরে গত বছরও বন্দুক পাওয়া গিয়েছিল। এফবিআই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, শ্বেতাঙ্গ যুবক ব্র্যান্ডনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন তাকে কোনো বর্ণবিদ্বেষ মনোভাবাপন্ন মনে হয়নি।
গত ১৭ই এপ্রিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “প্রতিদিন বন্দুক সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ মারা যাচ্ছে। এসব ঘটনা এ দেশের জাতীয় চরিত্র ও আত্মায় কালিমা লেপে দিচ্ছে। আমাদের এখনই সক্রিয় হয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করে মানুষ বাঁচাতে হবে।” প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইন্ডিয়ানাপোলিসের ঘটনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মাসের শুরুতে কতিপয় নির্বাহী আদেশ জারি করে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নিয়ছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বৈধ–অবৈধ অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণে কংগ্রেসের সরাসরি আইন প্রণয়ন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর সঙ্গে সরাসরি জড়িত যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কোনো ছাড় দিতে ইচ্ছুক নয় রিপাবলিকান দল।
বন্দুক নিয়ন্ত্রণে সর্বজনীন ব্যাকগ্রাউন্ড চেক বাধ্যতামূলক করার আইন প্রণয়নের জন্য মার্কিন সিনেটের প্রতি আবার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতায় ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ বছর এই সহিংসতা আরও বেড়ে গেছে। মধ্য মার্চে আটলান্টায় এশীয় মার্কিনদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই কলোরাডোতে একটি গ্রোসারি স্টোরে এমন এক বন্দুকধারীর হামলায় আরও ১০ জন নিহত হয়েছিল।
২০২১ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এলোপাতাড়ি ১৪৭টি বন্দুক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় চারজন বা তার বেশি হতাহত হয়েছে। চারজনের কম মৃত্যু হয়েছে, প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রের নগর জনপদে এমন আরও অসংখ্য বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগে টেক্সাসে বাংলাদেশি একটি পরিবারের দুই তরুণ সহজেই বন্দুক সংগ্রহ করে পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার পর নিজেরাও আত্মহত্যা করেছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, “ঈশ্বরের নামে জিজ্ঞেস করতে চাই, কার এমন আগ্নেয়াস্ত্র রাখার প্রয়োজন যাতে ২০, ৪০ বা ১০০ রাউন্ডের গুলি থাকবে!”
বিষয়টিকে চিন্তার মারাত্মক ভুল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হব না।”
রিপাবলিকান দল প্রতিনিধি পরিষদে পাশ করা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন সিনেটে আলোচনাই করতে ইচ্ছুক নয়। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, “আমি আমার রিপাবলিকান বন্ধুদের একান্ত আহ্বান জানাতে চাই, প্রতিনিধি পরিষদে পাশ করা খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে এখনই আপনারা সক্রিয় হোন। জাতির জন্য বিব্রতকর এ বিষয়টির অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে।”
Leave a Reply