শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

নোটিশ :
Welcome To Our Website...
আজকের সংবাদ শিরোনাম :
বাইডেন অবশেষে সমাপ্তি টানলেন আফগানিস্তান যুদ্ধের

বাইডেন অবশেষে সমাপ্তি টানলেন আফগানিস্তান যুদ্ধের

নিউজ ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা যদিও বলেছিলেন, চলতি বছর ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে, কিন্তু এ বিষয়ে পূর্বসুরী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তালেবানগোষ্ঠীর সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন, তাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সেই অনুযায়ী আগামী ১ মের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

২০০১ সালের অক্টোবরে হোয়াইট হাউসের যে কক্ষটি থেকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিমান হামলার ঘোষণা দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ, সেই একই কক্ষ থেকে বুধবার দেশটি থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা ঘোষণা করে বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের ইতি টানার সময় এসেছে।’

বুধবারের ঘোষণায় বাইডেন বলেন, ‘আফগানিস্তানে একটি আদর্শ সময় আসবে, তখন যাবতীয় সেনা প্রত্যাহার করা হবে— এই চিন্তার বশবর্তী হয়ে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখা মোটেও কার্যকর ও সমীচীন কোনো পথ হতে পারে না।’

‘আমরা আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম, কারণ ২০ বছর আগে আমাদের দেশে একটি ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছিল; কিন্তু তাই বলে ২০২১ পর্যন্ত সেই হামলার জের টানার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

‘এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, দেখা যাচ্ছে— বর্তমানে আফগানিস্তানে কর্মরত অনেক মার্কিন সেনা সদস্যের পিতা-মাতা, অভিভাকরাও এই যুদ্ধের শুরুতে সেখানে দায়িত্বপালন করেছেন। এমন অনেক সেনাসদস্য সেখানে আছেন, নাইন-ইলেভেন হামলার সময় যাদের জন্মও হয়নি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কোনো অভিপ্রায় যুক্তরাষ্ট্রের নেই।’

তবে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা নেওয়া হলেও দেশটির গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও আফগানিস্তানে আমাদের কূটনৈতিক ও মানবিক কার্যক্রম অবহ্যাহত থাকবে। আফগানিস্তান সরকারের প্রতিও যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন চালিয়ে যাবে।’

তালেবানসহ আফগানিস্তানের চরমপন্থি ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সবসময় সহযোগিতা করে যাবে বলেও ঘোষণায় উল্লেখ করেছেন জো বাইডেন।

অপরদিকে ন্যাটো জোটও একই মত দিয়েছে। ন্যাটোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতি রেখে তারাও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টোনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে জোটের মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গ জানান, ন্যাটো তাদের ৭ হাজার সেনার সবাইকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

আরও জানান, ১ মে থেকে ‘রেসুলুট সাপোর্ট’ সেনাদের প্রত্যাহার শুরু হবে এবং কয়েক মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন হবে।

তবে এটাও বলা হচ্ছে, প্রত্যাহার করার সময় তালেবান যদি আক্রমণ করে, তবে তাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। ন্যাটো জানিয়েছে, আফগানিস্তানকে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। ন্যাটোকে ধন্যবাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা কখনোই ন্যাটোর দেশগুলোর এই সহযোগিতা ও পাশে থাকার কথা ভুলবে না।

এদিকে, বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়ামা বার্নস দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের এক শুনানিতে বলেছেন, আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীর যে অবস্থা, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিলে তারা তালেবানদের বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হবে। তার আগের দিন মঙ্গলবার দেশটির উচ্চপদস্থ এক সরকারী কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করলে তালেবান তার পূর্ণ শক্তিতে এগোনো শুরু করবে আফগানিস্তানে।

বাইডেনের ঘোষণার পর অনাগত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আফগানিস্তানে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি যদিও সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন, তবে তালেবানগোষ্ঠী ও আফগান সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কাউন্সিলের সদস্য আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এখন আফগানিস্তানকে তালেবানদের সঙ্গে সহাবস্তানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘তালেবান ও আফগান সরকার— উভয়কেই এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে যে, যুদ্ধে উভয়পক্ষের ক্ষতি ছাড়া অন্য কোনো লাভ নেই।’

ইরানের সীমান্তঘেঁষা আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে বসবাসকারী রোইনা উসমানি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আদর্শ সময় এটি নয়। যদি সত্যিই এমন পদক্ষেপ নেওয় হয়, সেক্ষেত্রে গত বিশ বছরে আমাদের যে অর্জনগুলো আছে, সবগুলো হুমকির মুখে পড়বে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে দেশের নারীরা।’

‘তালেবানদের ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। আমরা ২০ বছর আগের আফগানিস্তানে ফিরতে চাই না।’

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ মাজার ই শরীফের অধিবাসী মোহাম্মদ আসকার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদস্যরা যদি ফিরে যেতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদের একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী তা করা উচিত। তা না হলে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে।’

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আলকায়দা নেটওয়ার্ক নিউইয়ার্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইনটাওয়ারে হামলার পর ওই বছর অক্টোবরে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে। অভিযান শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে মার্কিন-ন্যাটো বাহিনীর ৩ লক্ষাধিক সৈন্য থাকলেও পরবর্তী বছরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েক দফায় সেনাদের অধিকাংশকেই প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো।

বর্তমানে দেশটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। তাদের প্রত্যাহারের ব্যাপারে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানদের সঙ্গে চুক্তি করেছিল তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন।

সেই অনুযায়ী চলতি বছর ১ মের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল চুক্তিতে। জো বাইডেনের বুধবারের ঘোষণায় সমাপ্তি ঘটল সেই অনিশ্চয়তার।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আর্কাইভ

April 2021
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

Weather

booked.net




© All Rights Reserved – 2019-2021
Design BY positiveit.us
usbdnews24