শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৬:০৪ অপরাহ্ন

নোটিশ :
Welcome To Our Website...
আজকের সংবাদ শিরোনাম :
একটি শক্তিশালী গ্রামীণ স্বাস্থ্য অবকাঠামো আছে বাংলাদেশের

একটি শক্তিশালী গ্রামীণ স্বাস্থ্য অবকাঠামো আছে বাংলাদেশের

নিউজ ডেস্কঃ  বাংলাদেশের আছে শক্তিশালী গ্রামীণ স্বাস্থ্য অবকাঠামো। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ না হয়েও বাংলাদেশ গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এ ধরনের নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো সচরাচর দেখা যায় না। গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্য খাতের অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এই অবকাঠামোর।

এখন মানুষের বাড়ির পাশে আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। ইউনিয়নে আছে ইউনিয়ন সাবসেন্টার। তার ওপরে আছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এরপর আছে জেলা হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। তবে এই নেটওয়ার্ক এক দিনে গড়ে ওঠেনি।

এই নেটওয়ার্কের সুবিধা দেখা গেছে করোনা টিকার দেওয়ার আয়োজনে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় এই টিকা দেওয়া হচ্ছে এবং সারা দেশের তথ্য অল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকার সংগ্রহ করতে পারছে। এ ধরনের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেক উন্নত দেশ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে।

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণা করেছেন পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী তৌফিক জোয়ারদার। তৌফিক জোয়ারদার বলেন, “স্বাধীনতার পর হাতে নেওয়া প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখনই থানা পর্যায়ে হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ উদ্যোগ ছিল কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা।”

বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বিভাগ (৮টি), জেলা (৬৪টি), উপজেলা (৪৯২টি), ইউনিয়ন (৪ হাজার ৫৭১টি) এবং ওয়ার্ড (৪০ হাজার ৯৭৭টি) পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রায় সমান্তরালভাবে বিন্যস্ত স্বাস্থ্য অবকাঠামো। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি অধিদপ্তর—স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মানুষকে পরিবার পরিকল্পনা, টিকা, যক্ষ্মার চিকিৎসা, পুষ্টিসেবা দেয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত আটটি মেডিকেল কলেজ, একটি স্নাতকোত্তর মেডিকেল ইনস্টিটিউট, ৩৭টি যক্ষ্মা ক্লিনিক, ১৫১টি গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৯১টি মাতৃ ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দেওয়া শুরু করেছিল। ৫০ বছরে এই সংখ্যা শুধু বাড়েনি, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।

উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র

১৯৭৮ সালে আলমা-আটা ঘোষণায় সই করা দেশগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। ওই ঘোষণায় ২০০০ সালের মধ্যে “সবার জন্য স্বাস্থ্য” নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এই উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল। একটি দিশারি প্রকল্পের আওতায় ১৯৭৯ সালে ছয়টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়।

এরপর দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (১৯৮০-১৯৮৫) প্রতিটি উপজেলায় একটি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র তৈরির কথা বলা হয়।

বর্তমানে প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। এগুলো ৩১ থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগ আছে। এ ছাড়া আছে পৃথক মা ও নবজাতক বিভাগ। বিশেষায়িত ছাড়া এই হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এসব হাসপাতালে টিকা দেওয়া হয়, শ্বাসতন্ত্রের তীব্র প্রদাহের চিকিৎসা আছে, পরিবার পরিকল্পনা সেবা দেওয়া হয়। পুষ্টিসেবার জন্য আছে বিশেষ কর্নার। আছে এক্স–রে সুবিধাসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ।

ইউনিয়ন সাবসেন্টার

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র আছে। এদের কিছু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কিছু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর পরিচালনা করে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এসব কেন্দ্র খোলা থাকে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে চিকিৎসকের পদ আছে।

সরকার ইতিমধ্যে প্রায় ১০০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিডওয়াইফ পদ সৃষ্টি করেছে। কিছু কেন্দ্রে নিয়োগও হয়েছে। এর উদ্দেশ্য নিরাপদ প্রসূতিসেবা, নিরাপদ স্বাভাবিক সন্তান জন্মদান ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা।

কমিউনিটি ক্লিনিক

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। এ পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক সরকার গড়ে তুলেছে। এটি সর্বনিম্ন স্তরে স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। ক্লিনিকগুলো এখন একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ক্লিনিকগুলো গড়ে উঠেছে স্থানীয় মানুষের দান করা জমিতে।

কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রায় ৩০ ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। ক্লিনিক থেকে দেওয়া সেবার মধ্যে আছে: মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা, প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান, পুষ্টিশিক্ষা ও অনুপুষ্টি কণা সরবরাহ, স্বাস্থ্যশিক্ষা, বয়স্ক ও কিশোর-কিশোরীদের লক্ষণভিত্তিক শিক্ষা, অসংক্রামক রোগ শনাক্তকরণ।

সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকগুলো খোলা থাকে। মূলত তিনজন কর্মী কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করেন।

কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমন্বয়ে সারা দেশে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে বিভিন্ন ধরনের এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আর্কাইভ

April 2021
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

Weather

booked.net




© All Rights Reserved – 2019-2021
Design BY positiveit.us
usbdnews24