নিউজ ডেস্কঃ বাংলা একাডেমিতে এবার আর বৈশাখী মেলা হচ্ছে না, তবু বসে নেই শখের হাঁড়ির কারিগর সুশান্ত পাল। মাস দুয়েক আগে তিনি একটি শখের হাঁড়ি তৈরি করেছেন। মেলা হবে না, তাই তাঁর ছেলে এই হাঁড়িটার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। হাঁড়িটার দাম উঠেছে ১০ হাজার টাকা। সুশান্ত সে দামে হাঁড়িটা বেচতে রাজি নন। মনের মাধুরী মিশিয়ে বানানো হাঁড়িটা নিজের চোখের সামনে রেখেই দিতে চান। তবে এই শখের হাঁড়িকে এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর স্বীকৃতির জন্য কাজ চলছে।
সুশান্ত কুমার পাল একাধিকবার দেশের সেরা কারুশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হয়ে গেছেন জাপানে। জাপানি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে তাঁর ছবি। শুধু তা-ই নয়, পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইতেও রয়েছে সুশান্ত পালের ছবি। এবার মেলা হচ্ছে না। তাঁদের বড় দুঃসময়।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের অনেকেই এখন পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন কিন্তু সুশান্ত পাল বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারেননি। বয়স হয়েছে প্রায় ৬১ বছর। এখনো স্ত্রী মমতা রানী পাল, দুই ছেলে সঞ্জয় কুমার পাল ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল, এক মেয়ে সুচিত্রা রানী পাল এবং দুই ছেলের স্ত্রী মুক্তি রানী পাল ও করুণা রানী পাল—সবাই এখনো কারুশিল্পী। তাঁর ভাই সন্তোষ কুমার পাল ও ভাতিজা সুকেশ কুমার পালও রয়ে গেছেন পুরোনো পেশায়। পরিবারের সবাই মিলে সারা দেশে মেলা করে বেড়ান। এবার সেই মেলা নেই।
গত বছর মেলা ধরার জন্য সুশান্ত পালের পরিবার ছয় মাস ধরে কারুপণ্য প্রস্তুত করেছিলেন। গত মাসে সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্পী মেলায় কিছু মাল বিক্রি হয়েছে। পড়ে আছে এখনো অনেক। প্রতিবছর ঢাকায় বৈশাখী মেলায় প্রায় ৪ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। মূলত এই আয় দিয়েই তাঁদের সারা বছর চলতে হয়।
গত শনিবার দুপুরে সুশান্ত পালের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক আহমেদ উল্লাহ, উপপরিচালক রবিউল ইসলাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রওশন জাহিদ তাঁর কাজ পরিদর্শনে গেছেন। তাঁরা মূলত শখের হাঁড়িকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতির জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য গেছেন।
উপপরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁরা উত্তরাঞ্চলে অনেক জায়গায় গেছেন। শুধু সুশান্ত পালের বাড়িতেই শখের হাঁড়িকে ভালো অবস্থায় পেয়েছেন। তিনি বলেন, শীতলপাটি ও জামদানি শাড়ি এই স্বীকৃতি পেয়েছে। নিশ্চয়ই শখের হাঁড়িও সেই স্বীকৃতি পেতে পারে।
অতিথিদের সামনেই রাখা ছিল সুশান্ত পালের সেই শখের হাঁড়ি। এর গায়ে লোকশিল্পের যত ধরনের মোটিফ রয়েছে, তার সব কটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, হাতি, ঘোড়া, পাখি, মাছ, ফুলসহ বাংলার প্রকৃতির আরও অনুষঙ্গ। সুশান্ত বলেন, হাঁড়িটা বানাতে তাঁর ছয় দিন সময় লেগেছে। রং করতে লেগেছে আরও ছয় দিন। হাঁড়িটা আসলে তিনি বেচতে চান না।
Leave a Reply