শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

নোটিশ :
Welcome To Our Website...
আজকের সংবাদ শিরোনাম :
নারী তুমি রানি

নারী তুমি রানি

ধর্ম ডেস্কঃ আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেই রাসূলুল্লাহ (সা.) মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য চাই নারী উন্নয়ন।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, নারীকে অন্ধকারে রেখে ও পেছনে ঠেলে কোনো পরিবার, সমাজ ও জাতিই আলোর মুখ দেখতে পারে না। এগিয়ে যেতে পারে না। তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে না।

আর নারী উন্নয়নের জন্য চাই নারীর মর্যাদা, নারী শিক্ষা ও নারীর আর্থিক স্বাবলম্বিতা। আর তা অত্যাবশ্যকীয় এবং অপরিহার্য। ঘরে বাইরে সর্বত্র সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নারীকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

নারীর মর্যাদাকে সর্বোচ্চ তুলে ধরতে তিনি ঘোষণা করেন মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। জানা যায়, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, আমার কাছে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী কে?

রাসূলুল্লা (সা.) বললেন, তোমার মা। বাহ! কী সুন্দর অভিব্যক্তি, কী চমৎকার শিক্ষা, কী অনুপম আদর্শ। জাহেলিয়াতের অন্ধকারে ঢাকা বর্বর আরবরা যেখানে তাদের কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দিত সেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জীবনকে করে তুলেছিলেন কন্যা ফাতিমাময়।

ফাতিমা ছিল তার পরম আদরের ধন, কলিজার টুকরা। নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে সমুন্নত করতে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, তারাও (নারী) তোমাদের ভূষণ, তোমরাও (পুরুষ) তাদের ভূষণ (সূরা বাকারা; ১৮৭)।

এ ছাড়া বলেন, মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষ একে অপরের সহযোগী বা বন্ধু (সূরা আততাওবাহ; ৭১)।

এ ছাড়া আল্লাহ পুরুষদের লক্ষ্য করে পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমরা নারীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো, কেননা তারা তোমাদের মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যা। আর তাই তো জীবন বাস্তবতায়ও দেখা যায়, নারী-পুরুষ একে অপরের সহায়ক, পরিপূরক, আর একে অপরের ওপর নির্ভরশীলও বটে।

নারী কখনো সেবাদাসী নয়, নারী অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। তবে এ মহাসত্যকে উপলব্ধির জন্য চিন্তাশীল ও বিবেকসম্পন্ন অন্তর চাই। ধর্মের নামে নারীকে ধোঁকা দেওয়ার ও বোকা বানানোর কোনো সুযোগ নেই। ধর্মান্ধতা ও অচেতনতার কারণেই আমরা ধর্মের নামে ধোঁকা খাই, বোকা হই।

নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্যই ইসলাম ধর্ম নারীকে যাবতীয় সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার ও সুযোগ দিয়েছে। নারীর অধিকার সুরক্ষার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) মসজিদে, ঈদের জামাতে, জানাজায়, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছেন।

ওহুদের যুদ্ধে উম্মে আম্মারার বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ধর্মের শিক্ষা সুমহান বলেই ধর্ম মানুষের অত্যন্ত সুন্দর ও পবিত্র অনুভূতি।

জাহেলিয়াতের অন্ধকারে ঢাকা আরব ভূমিতে রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন নারী মুক্তির সংগ্রামের অগ্রদূত। নারী উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে তিনি সদা তৎপর ছিলেন। অধিকার বঞ্চিত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত অসহায় নারীর দুঃখ, দুর্দশা, দুর্ভোগ দেখে সদাই তার অন্তর কেঁদেছে।

তিনি বুঝতে পেরেছেন, নারীর ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য নারী শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই নারী শিক্ষাকে পুরুষের শিক্ষার মতোই ফরজ ঘোষণা করেছেন। তিনি কুরআনের শিক্ষাকে নারীদের মাঝেও ছড়িয়ে দিয়েছেন। কেননা কুরআন মানবের পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইসলাম উদারপন্থি ধর্ম এবং সর্বাধুনিক ধর্ম। ইসলামের সুমহান শিক্ষা কখনো পুরোনো হওয়ার নয়, এ শিক্ষা চির নিত্য-নবীন। কুরআন মহাজ্ঞান ভান্ডার।

মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম শিক্ষা। জীবনের প্রয়োজনীয় সব মৌলিক বিষয়ের মৌলিক শিক্ষা। কুরআনের সুমহান শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতিকে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও বর্বরতার অন্ধকার থেকে সভ্যতার আলোয় আনতে পারে যদি এ শিক্ষা বোধগম্য (গণবোধসম্য) ভাষায় হয়। কেননা শিক্ষা ও জ্ঞানের সবচেয়ে বড়, শক্তিশালী ও অপরিহার্য হাতিয়ার বোধগম্য ভাষা।

বোধগম্য ভাষার অক্ষর জ্ঞান মানুষের চোখের আলো, বোধগম্য ভাষার শিক্ষাজ্ঞান তাদের মনের আলো যা তাদের অনুভূতির চোখ ফোটায়, উপলব্ধির দুয়ার খুলে দেয়। মাতৃভাষার কুরআন শিক্ষা হতে পারে সমাজ ও জাতিকে ধর্মাজ্ঞতা, ধর্মান্ধতা ও নিরক্ষতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার সর্বোত্তম উপায়।

দেশের প্রত্যন্ত জনপদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও তা জাগিয়ে তুলতে পারে। শহর এবং গ্রামীণ জনপদের সর্বত্রই জনসাধারণের দোরগোড়ায় একটি আদর্শলিপি ও একখানা মাতৃভাষার কুরআন (অনুবাদ) বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার এক অনন্য উদ্যোগ নিতে পারে রাষ্ট্র ও সরকার। যা রাষ্ট্র ও সরকারের নিরক্ষরতা মুক্তির আন্দোলনকে দ্রুত সফলতা এনে দেবে।

সঙ্গে নারী শিক্ষার ভিতকে মজবুত করবে। কেননা এ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝেও ধর্মীয় চেতনা প্রবল। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে না পারলেও খোদার ভয়ে তাদের কুরআন শিক্ষা দিতে মসজিদ-মাদ্রাসায় পাঠান। তাই ধর্মীয় শিক্ষার উপলক্ষ্য হতে পারে সমাজ ও জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার সর্বোত্তম উপায়। নারী তো বটেই।

পুরুষরাও নিরক্ষরতামুক্ত হবে। প্রচলিত আনাকুম-বানাকুমের অক্ষরজ্ঞান আর অবোধ ভাষার কণ্ঠস্বর বিদ্যা ও কাজকে যথার্থভাবে আলোয় আনতে পারে না। মাতৃভাষার কুরআন যেমন নিরক্ষরতা দূর করবে তেমনি সবাইকে ধর্ম সচেতন করবে। নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আরও বেগবান করবে।

৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। নারী উন্নয়নের জন্য নারীর আর্থিক স্বাবলম্বিতা অপরিহার্য। তাই তো আল্লাহতায়ালা পিতা, মাতা, স্বামী ও সন্তানের সম্পত্তিতে নারীকে অধিকার দিয়েছেন। সুখের বিষয় যে, গ্রামীণ নারীরাও আজ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বহুমুখী আর্থিক সেবা পেয়ে ধীরে ধীরে হলেও স্বাবলম্বী হচ্ছে।

রাষ্ট্র, সরকার, বিভিন্ন আর্থিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান; নারীর চাহিদামতো আর্থিক সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে পারে এবং নারী উন্নয়নের জন্য বহুমুখী আর্থিক সেবা উদ্ভাবন কার্যক্রম চালু অব্যাহত রাখতে পারে তবে অচিরেই দেশ ও জাতি উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে। নারীর বদৌলতে পরিবার জেগে উঠবে।

গ্রামীণ নারীরাও আজ বিশ্বজগৎ দেখছে আপন হাতের মুঠোয় পুরে। তাদের হাতেও আজ মুঠোফোন। গ্রাম থেকে আসা গৃহকর্মীরাও আজ মোবাইল নাম্বার লিখে রাখতে কাগজ চাচ্ছে, কলম চাচ্ছে। বোঝা যায় তা দেখেই গ্রামীণ নারীরা কতখানি এগিয়ে গেছে।

বাঙালি নারীরা সফলতার যে স্বপ্ন দেখত, আজ তারা তাদের স্বপ্নডানা উড়িয়ে দিয়েই সফলতার আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। নারী আজ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এমপি, ডিসি, হাইকোর্টেরই জজ-ব্যারিস্টার, এমপি, স্পিকার, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং নারী উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে রোধ করার সাধ্য কার? পুরুষ নারীর অগ্রযাত্রার সহযাত্রী হলে দেশ ও জাতির টেকসই উন্নয়ন দ্রুত সম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আর্কাইভ

March 2021
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
232425262728  

Weather

booked.net




© All Rights Reserved – 2019-2021
Design BY positiveit.us
usbdnews24