নিউজ ডেস্কঃ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বের হওয়ার সুপারিশের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে আমাদের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হবে। নতুন নতুন সুযোগ সুবিধা তৈরি হবে। আমি মনে করি আমরা যা হারাবো তারচেয়ে বেশি পাবো।
বুধবার ( ৩ মার্চ) ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠক দুটি অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেছে তারা সবাই লাভবান হয়েছে। সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। আমাদের দেশে তেমন এফডিআই নেই। অনেকেই ভয়ে থাকতো এখানে বিনিয়োগ করবে কি না। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে বিনিয়োগ বাড়বে। তাছাড়া এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ায় বড় এলসি আমরা সরাসরি খুলতে পারি না। বিদেশের বড় কোন ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলতে হয়। এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে এসব বাধা দুর হয়ে যাবে। আমরা অর্থনীতিকে আরো মজবুত জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার লক্ষ্য থাকলেও সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে দুইবছর বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সিডিপির বৈঠকে আমি বলেছিলাম, একটি দেশ অনেক কষ্ট করে এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা লাভ করে। কিন্তু এই উত্তরণ সময়কালে অনেকের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আমরা যাতে নিজেদেরকে তৈরি করতে পারি সেজন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। তবে বলা হচ্ছে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাবে এটা সঠিক নয়। কারণ রপ্তানি পণ্যের ৭৫ ভাগ আমাদের আমদানি করা হয়। আর বাকিটা দেশের অভ্যন্তর থেকে যোগান দেওয়া হয়।
খাদ্য আমদানির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের এ বছর খাদ্য শস্য উৎপাদন কম হয়েছে। গতবছর বন্যা ও অতিবৃষ্টি কারণে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা পৌছাতে পারিনি। তবে আমরা সবসময় খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ বলে দাবি করি। যদি আগাম বন্যা না হয়, যদি কোনরকম ঝড় না হয় সেক্ষেত্রে সংকট হবে না। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে সাড়ে ৫ লাখ মে.টন চাল আমদানির লক্ষ্যে দরপত্র দাখিলের সময়সীমা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ হতে ৪২ দিনের পরিবর্তে ১০ দিন করার প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্রুত আমদানির জন্য এটা করা হয়েছে। তবে বেশি আমদানি কারণে যাতে করে দেশের বাজারে বিরূপ প্রভাব না সে বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় মনিটরিং করবে।
সভা শেষে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ৩টি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ২টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার জন্য বেজা ও বেপজার মধ্যে স্বাক্ষরিতব্য চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল এর নির্মাণ কাজ শেষে আন্তর্জাতিক মানের বেসরকারি অপারেটর নিয়োগের লক্ষ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবসমূহ হলো, বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সিগঞ্জ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের মাটি ভরাট (ভূমি উন্নয়ন ও পুকুর খনন করে মাটি ভরাট) কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লি. কে ১২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) প্রকল্পের প্যাকেজ নং-এ-৪৮ এর লট-৫ এর আওতায় ১৩০ কি.মি. ১১কেভি ও ৩৩কেভি ভূগর্ভস্থ ক্যাবল ৭৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় পলি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এর নিকট থেকে ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply