নিউজ ডেস্কঃ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে ষোলঘর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর মরদেহ রাখা হয় আইনজীবী সমিতি চত্বরে। সেখানে তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা তাঁর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে এবং দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত পৌরসভা চত্বরে রাখা হয় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার নিবেদনের জন্য। পৌরসভা চত্বরে জেলা আওয়ামীলীগ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাঁকে মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
দুপুর ২টায় সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা ও ষোলঘর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে আড়াইটায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, সাবেক এমপি নজির। হোসেন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত, দোয়ারারবাজারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতীক, পুরাতন কোর্ট জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রব চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাজী নুরুল মোমেন, জেলা আওয়ামীলীগের সহভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম, অ্যডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুর রহমান, জুনেদ আহমদ, আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম শেফু, জগৎজ্যোতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ, দেওয়ান এমদাদ রাজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ শহরের বিশিষ্টজন ও সাধারণ মানুষ।
সদর থানার ওসি সহিদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকষ দল বজলুল মজিদ খসরুকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলাম মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দুপুর ৩টায় ষোলঘর কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু হাওর বাঁচাও আন্দোলন’ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন । আইনপেশা চর্চার পাশাপাশি একাধারে তিনি একজন লেখক, গবেষক, কলামিস্ট ছিলেন। ২০০০ সালে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগতজ্যোতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বজলুল মজিদ চৌধুরীর আদি নিবাস জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলায়। তবে তাঁর জন্ম শহরের ষোলঘরেই। ১৯৫২ সালের ২ এপ্রিল জন্ম নেয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সুনামগঞ্জ কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে ৫ নং সেক্টরে যোগদান করেন। ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে কর্ণেল) হেলালের অধীনে যুদ্ধ করেন চেলা সাব-সেক্টরে। ছাত্রজীবনে দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক সংবাদ-এর সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। সুনামগঞ্জ জেলার প্রথম সাপ্তাহিক সুনাম তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
তিনি‘একাত্তরের সুনামগঞ্জ’ ও ‘বরুণ রায় স্মারকগ্রন্থ’ সম্পাদনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার ফলস্বরূপ ‘রক্তাক্ত ৭১: সুনামগঞ্জ’ বইটি লিখেন। মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হেলাল-খসরু হাইস্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বুধবার বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
Leave a Reply