পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত সিলেটে বছরজুড়েই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। তবে দুই ঈদে তা বেড়ে যায় বহুগুণ। গত এক দশকে তাই এ খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেষ্টুরেন্ট।
তবে চলমান করোনা মহামারির কারণে হঠাৎ থমকে গেছে সম্ভাবনাময় এ খাতটি। চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটির দিন থেকেই স্থবিরতা নেমে আসে সিলেটের পর্যটন খাতে। বন্ধ হয়ে যায় হোটেল-মোটেলগুলো। পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ফাঁকা রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। একারণে কাজ হারিয়েছেন এ খাতের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী।
সিলেটের হোটেল-মোটেল মালিকরা বলছেন, প্রতিদিন কেবল সিলেটের হোটেল-মোটেল খাতে প্রায় ৩ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। অনেক উদ্যোক্তাই ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পর্যায়ে চলে এসেছেন। সাধারণ ছুটি শেষে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যান্য খাত কিছুটা সচল হলেও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সিলেটের পর্যটন খাত। তবে আসছে ঈদুল আযহাকে ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছেন সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যদি পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া যায় আর পর্যটক আসে তবে হয়তো কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব হবে।
সিলেটে হোটেল ও গেস্ট হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, বর্তমান করোনা মহামারির কারণে ৪ মাস ধরে প্রায় সব হোটেল মোটেল বন্ধ। এমন অবস্থায় কর্মচারীদের বেতন, ইউটিলিটি বিল এসব চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। বাধ্য হয়েই অনেক কর্মী ছাটাই করতে হয়েছে আমাদের। এমন অবস্থায় ঈদের আগে হোটেল মোটেল খুলে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত হয় তাতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছি। এখন যদি ঈদে পর্যটক না আসে তাহলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় দেখি না। তবে সিলেটের জেলা প্রশাসন বলছে, এখনই খুলে দেয়া হচ্ছে না সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, গত ঈদের মতোই এবারের ঈদে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। আগামী ঈদেও সিলেটের কোনো পর্যটন স্পট খুলবে না। জেলা কোভিড-১৯ বিষয়ক কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিলেটের হোটেল মোটেলগুলো খুলে দেবার সিদ্ধান্ত দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আপাতত হোটেল মোটলেগুলো সীমিত আকারে খুলে দেয়া হলেও কোভিড-১৯ এর বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যটন স্পট খোলার কোনো নির্দেশনা নেই।
প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে আশাহত সিলেটের পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব এ প্রসঙ্গে বলেন, সিলেটে তেমন ভারী শিল্প-কারখানা নেই। পর্যটন সিলেটের একটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমান করোনা মহামারিকালে পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ঈদে পর্যটক আগমনের কথা মাথায় নিয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন এখাতের উদ্যোক্তারা। এমন অবস্থায় যদি সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিষেধাজ্ঞা থাকে তবে দ্বিতীয় দফা ক্ষতির মুখে পড়বে ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, আমরা আশা করবো প্রশাসন এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন। অন্তত সীমিত পরিসরেও যদি পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হয় তাহলে এখাতে কর্মরতদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
Leave a Reply