সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে বিপদসীমার উপর সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি নদীর পানি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়ক, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কসহ উপজেলার কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে সড়ক পথে যোগাযোগ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
শুক্রবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর ব্রিজ সামনের সড়কে পানিতে তলিয়ে যাওয়া অংশ পরিদর্শন করেছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন।
এ সময় উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, কাজটি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে টেন্ডার হয়। পরবর্তীতে দরপত্র সংশোধনী প্রাক্কলনে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৩ কোটি টাকায় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
আনোয়ারপুর সেতু এলাকার ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া বলেন, ঠিকাদার ও এলজিইডির গাফিলতির কারণে ৩ বছর ধরে এ সড়কটিতে চলাচলকারীরা বর্ষা এলেই ভোগান্তিতে পড়েন।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, জেলা শহরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক। আনোয়ারপুর সেতুর পূর্বাংশের অ্যাপ্রোচ নির্মাণাধীন কাজে গাফিলতির কারণে চলাচলে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত কাজটি সম্পন্নের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শুক্রবার সকালে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকাল পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর বাদাঘাট ও সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর সড়ক পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে যানচলাচল চরম দুর্ভোগের কারণে সাধারণ মানুষদের চলাচল করতে গিয়ে পোহাতে হয় ভোগান্তি। এছাড়া ঢলের পানিতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্তের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে নিম্ন এলাকার বাড়ি ঘরের কাছাকাছি পানি চলে এসেছে। আর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সচেতন মহল।
তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কে চলাচলকারী আমির মিয়া জানান, শুষ্ক মৌসুমে সড়কে মেরামত কাজ না করায় বর্ষা চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কয়েকটি স্থানে সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌকা নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে।
সুনামগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের সিএনজিচালক আরিফ মিয়াসহ অনেকে জানান, এই সড়কের লালপুর, শক্তিয়ারখলার একশত কিলোমিটার, আনোয়ারপুর সড়কসহ কয়েকটি স্থানে পানিতে ডুবে যাওয়ায় যাত্রী নিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে পরেছে। আরও পানি বাড়লে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে নদীতে পানি বাড়ছে। এই সময়টাতে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক। বৃষ্টি বাড়লে পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়বে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ জানান, উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি।
Leave a Reply