সিলেট বিভাগের চার জেলা হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটে একের পর এক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। বয়স্ক, যুবক, তরুণ থেকে শুরু করে শিশু-সব বয়েসী মানুষই এ তালিকায় আছে। জেলা-উপজেলা তো বটেই, এমনকী গ্রাম পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসকসহ তিনজনের। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন সিলেটের একাধিক বাসিন্দা। তাঁদের ভাষ্য, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নতুবা ভয়াবহ বিপদ ধেয়ে আসতে পারে।
সিলেটের চার জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্তদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে-ক্রমশ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত বিভাগে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২২৯ জনের মধ্যে। এ তুলনায় সুস্থ হওয়ার সংখ্যা এখনও আশাব্যঞ্জক নয়। আক্রান্তদের মধ্যে সুনামগঞ্জের মাত্র একজন সুস্থ হয়েছেন। বাকিদের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও হাটবাজার ও গ্রামাঞ্চলে এখনও মানুষজন নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন না বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। এ অবস্থা যদি চলমান থাকে তাহলে সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রæতগতিতে বাড়বে বলেই তাঁরা মনে করছেন।
হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের পাঁচজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এ দুটি জেলা। বিশেষত নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আগত মানুষদের সংখ্যা এ দুটি জেলাতেই বেশি। আগতরা সামাজিক দূরত্ব না মেনে এতদিন বিভিন্নজনের সঙ্গে মেলামেশার কারণে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়মিত বেড়ে চলছে। এ ছাড়া অনেকে করোনা ল²ণ গোপন করে চিকিৎসা গ্রহণের কারণে হবিগঞ্জ জেলায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। মানুষজনকে ঘরের ভেতরে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে। তবেই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
সিলেটের সচেতন নাগরিকদের অভিমত, কেবল অসচেতনতার কারণেই সিলেট বিভাগে করোনা সংক্রমণের পরিমাণ বাড়ছে। লোকজন যেন এখনও করোনাভাইরাসের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তা না হলে কেন বার বার প্রচার করা সত্তে¡ও মানুষজন ঘরের বাইরে বেরোচ্ছেন? যাঁরা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অযথাই বাইরে বেরোচ্ছেন, তাঁরা যে কেবল নিজেরাই ঝুঁকিতে পড়ছেন, তা নয়। বরং এঁরা তাঁদের পরিবারসহ অন্যদেরকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন। তাই সিলেটবাসীর সামনে এখন কী অপেক্ষা করছে, সেটা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। একই মহলটির ভাষ্য, পরিস্থিতি একবার অবনতির দিকে চলে গেলে সেটা আর রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই বিষয়টিকে কারও জন্যই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।
সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘ভয় পাওয়ার কিংবা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শুধুমাত্র স্বাস্থবিধিগুলো মেনে চললেই করোনা এড়ানো সম্ভব। ঘরে থাকতে হবে। বার বার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে।’ আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঠিক একই পরামর্শ দিয়েছেন। প্রত্যেকেই সরকারের নির্দেশনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
অনেকেই জানিয়েছেন, যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে, এতে মানুষজনের মধ্যে ভয় আর আতঙ্ক ঢুকে গেছে। সবার মধ্যেই ভবিষ্যত নিয়ে একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কখন কীভাবে যে কার মাধ্যমে এই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে, এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সবাই। তবে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মানুষজন যেন অযথা যত্রতত্র ঘোরাঘুরি করতে না পারেন, সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি প্রতিদিনই সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। বাড়ির বাইরে অবস্থান করতে সবাইকে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি ঘরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার জন্যও সবাইকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে যদি কাউকে একান্তই ঘরের বাইরে বেরোতে হয়, তবে ওই ব্যক্তি যেন মাস্ক ও গ্লাভস পরে বেরোন, তা-ও জানানো হচ্ছে।
সিলেট বিভাগের মধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। এ বিষয়ে কথা হয় হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শের কারণে হবিগঞ্জে মূলত করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুরো জেলায় যেন সার্বক্ষণিক সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যায়, সেদিকে আমরা মনোযোগী হয়েছি। মানুষজন যেন বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যান, সে জন্য ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানো হয়েছে।’ সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ জানিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে তাঁরাও নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
Leave a Reply