করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাব চলাকালীন সময়ে ও পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যখাতের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক ও নার্স কোনও ছুটি পাবেন না।’
বৃহস্পতিবার বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে মোট ১৭ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী আছে। ১৭ জনের সবাই বিদেশ ফেরত ব্যক্তি অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজন। এ কারণে বিদেশ থেকে আর কোনো ব্যক্তি এই মুহূর্তে দেশে না এলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সহজতর হবে।’
করোনা ভাইরাসের এই দুর্যোগপূর্ণ সময় বিভিন্ন স্থানে বিয়ে, গণজমায়েত হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে কভিড-১৯ রোগটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। এ জন্য এই মুহূর্তে দেশে কোনো রকম গণসমাবেশ আয়োজন করা যাবে না। বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। স্কুল-কলেজ আগেই বন্ধ করা হয়েছে। এখন সৌদি আরবের মতো আমাদের দেশেও জুমার নামাজ জমায়াতের সাথে না পড়ে ঘরেই পড়তে হবে।’
কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানুষ মানছে না, এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা টঙ্গির ইজতেমা ময়দান কোয়ারেন্টিনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা জোরালো করতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
এ সময় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান, মো. সিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এবং এখন পর্যন্ত তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
উল্লেখ্য, চীনে করোনা ভাইরাস প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও চীনের বাইরে ব্যাপক আকারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এতে বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৩৮৯ জনের। এর মধ্যে উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৪৫। চীনের বাইরে মারা গেছে ৬ হাজার ১৪৪ জন।
এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জন। এর মধ্যে ৮৬ হাজার ২৫৬ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৯২৮ জন। দেশটিতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭০ হাজার ৪২০ জন। এছাড়া চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪৬ জন মানুষ।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৯ জন আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৭ জনের অবস্থা সাধারণ (স্থিতিশীল অথবা উন্নতির দিকে) এবং বাকি ৬ হাজার ৯৪২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আক্রান্তের অনুপাতে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশ এবং সুস্থতার হার ৯০ শতাংশ।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়সুস অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারগুলো এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি সরকারগুলোকে নিজ নিজ দেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৭৭টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
Leave a Reply