খবরটি সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য ‘সুখবর’ হয়েই এসেছিল। এ অঙ্গনে বাজছিল আনন্দের সুর। কিন্তু সেই সুর কেটে গেছে, আনন্দ রূপ নিয়েছে বিষাদে।
প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সিলেটে। কিন্তু আপাতত হচ্ছে না সেই ম্যাচ। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ম্যাচটি স্থগিত করা হয়েছে।
আগামী ২৬ মার্চ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল ঢাকায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। কিন্তু ওই দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এ দিবসে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ম্যাচটি সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ও এএফসিকে। এ দুই সংস্থাও এতে সায় দিয়ে জেলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে আসার বিষয়ে রাজি হয়।
বাফুফের পক্ষ থেকে সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। বলা হয়, জেলা স্টেডিয়ামকে পুরোদমে যাতে প্রস্তুত রাখা হয়।
বাংলাদেশে বিশ্বকপ ফুটবলের বাছাইপর্বের ম্যাচ সবসময় ঢাকায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই আয়োজিত হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে সিলেটে একটি ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে আনন্দের সুর বাজতে থাকে। ক্রীড়াপ্রেমীরা ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে মুখিয়ে ছিলেন। সাজ সাজ রব পড়েছিল এখানকার ক্রীড়াঙ্গনে।
কিন্তু করোনাভাইরাস স্থবির করে দিয়েছে সব। এ ভাইরাস বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে। ফলে আগামী ২৬ মার্চ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচটি স্থগিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ফিফা ও এএফসিও সম্মতি দিয়েছে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ ম্যাচ স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) থেকে ম্যাচ স্থগিতের নির্দেশনা এসেছে। শুধু ২৬ মার্চের ম্যাচই নয়, আগামী জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় সব ম্যাচই স্থগিত করতে বলেছে এএফসি। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত হয়েছি।’
সোমবার এ খবরে বিষাদে ছেয়ে যায় সিলেটের ক্রীড়াঙ্গন। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মতো বৃহৎ আয়োজনের বাছাইপর্বের ম্যাচ নিয়ে এখানকার ক্রীড়াঙ্গন, ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে যে উৎফুল্ল ভাব ছিল, তা উবে যায়।
ক্রীড়া সংগঠক ইকলাল আহমদ বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ সিলেটে হবে, এ নিয়ে আমরা খুবই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আমাদের আগ্রহে পানি ঢেলে দিয়েছে করোনাভাইরাস। আমরা অনেক হতাশ।’
ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার ও ক্রীড়া সংগঠক এ কে এম তুহেম বলেন, ‘সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে সুসংবাদ হয়ে এসেছিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ আয়োজনের বিষয়টি। কিন্তু এভাবে আমাদের আনন্দের আকাশ বিষাদে ছেয়ে যাবে, ভাবনায় ছিল না।’
স্থগিত হওয়া ম্যাচটি পরে কোনো এক সময় হবে। কিন্তু ওই সময় ঢাকা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম হয়তো প্রস্তুত থাকবে। ফলে ম্যাচটি আর সিলেটে না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
অবশ্য বাফুফের কার্যনির্বাহী সদস্য ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম এখনও আশাবাদী।
আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এতো বড় একটি ম্যাচ সিলেটে হবে, এজন্য এখনাকার মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত ছিলেন। আমরা ম্যাচ আয়োজনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ফিফা ও এএফসির নির্দেশনায় ম্যাচটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।’
সেলিম বলেন, ‘বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের ম্যাচ দেখতে সিলেটবাসী আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। ম্যাচটি পরে যখন হবে, তখন যাতে ভেন্যু হিসেবে সিলেটকে রাখা হয়, এজন্য আমি বাফুফের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি, করোনার প্রভাব কমে গেলে পরবর্তীতে ম্যাচটি সিলেটেই হবে।’
Leave a Reply