বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

নোটিশ :
Welcome To Our Website...
২০ বছরেও হলো না ‘মধুপল্লী’

২০ বছরেও হলো না ‘মধুপল্লী’

বাংলা অমৃতাক্ষর ছন্দের (সনেট) প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান যশোর জেলার কেশবপুর থানার সাগরদাঁড়ি গ্রামে। পিতা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত এবং মা জাহুবীদেবীর অতি আদরের সন্তান মধুসূদনের জন্ম ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে। তার জীবন যতটা না বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল যাতনায় ভরা। সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্ম নিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু সেই মধুকেই জীবনের নানা বাঁকে এসে পড়তে হয়েছে নিদারুণ অভাব ও অর্থকষ্টে। যে দেশ আর ভাষাকে তিনি ‘হেয়’ করে দেখেছেন ‘বৈশ্বিক’ হওয়ার তাড়না থেকে, শেষাবধি সেই তিনিই বলেছেন-

‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি, পর-ধন লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি।’

তিনি ইংরেজি শিক্ষার প্রতি ছিলেন খুব বেশি আকৃষ্ট। তিনি চেয়েছিলেন নিজেকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে। কিন্তু বাধ সাধেন তার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত। এ কারণেই তিনি নিজ জন্মভূমি ছেড়ে চলে যান কলকাতায়। সেখানে তিনি ইংরেজি শিক্ষার জন্য একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখাপড়ার হাতেখড়ি মৌলভী লুৎফর রহমানের কাছে। তিনি ছিলেন সাগরদাঁড়ি শেখপাড়া গ্রামের মসজিদের ইমাম। তিনি ছিলেন ফার্সি ভাষায় দক্ষ। মাইকেল মধুসূদন তাঁর কাছ থেকে ফার্সি এবং আরবি শিখতেন। মৌলভী লুৎফর রহমান ছিলেন তার শিক্ষাগুরু।

তিনি খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হেরিয়েটাকে বিয়ে করে পিতার চক্ষুশূল হয়ে যান। হেনরিয়েটাকে কলকাতা থেকে বজরায় করে নিয়ে আসেন সাগরদাঁড়িতে। কিন্তু পিতা রাজনারায়ণ দত্ত পুত্র এবং পুত্রবধূকে বাড়িতে ওঠানো তো দূরের কথা পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ পর্যন্ত নিতে দেননি। বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মারা যান।

কেশবপুর উপজেলা সদর থেকে সাগরদাঁড়ির দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। পিচের রাস্তা কিন্তু বন্ধুর পথ। যেহেতু কবির পিতা জমিদার ছিলেন। তাই তার ছিল অগাধ সম্পত্তি। কালের আবর্তে এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই ভূ-সম্পত্তি এখন বেহাত হয়ে গেছে। যে যেভাবে পেরেছে দখল করেছে। তারপর এখনও অনেক সম্পত্তি রয়েছে।

জানা গেছে, ১৮৬৫ সালে পাকিস্তান-সরকার কবিভক্তদের থাকার জন্য চারশয্যাবিশিষ্ট একটি রেস্টহাউজ বানিয়েছিল। এই রেস্ট হাউজেরই একটি রুমে পাঠাগার বানানো হয়। ১৮৮৫ সালে কবির বাড়িটি প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের কাছে সরকার ন্যাস্ত করে। কবির জন্মস্থান-খ্যাত ঘরটি এখন আর নেই। একটি তুলসি গাছ লাগিয়ে কেবল চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। কবির মূলবাড়ি সংলগ্ন আম বাগানে অবস্থিত আবক্ষ মূর্তিটি কলকাতার সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংক স্থাপন করে দেয়।

প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ জমিদারবাড়ির অসংখ্য ঘরের পলেস্তরা নতুন করে করেছে। একটি ঘরে কবির ব্যবহৃত অনেক কিছুই ঠাঁই পেয়েছে। ১৮৮৫ সালে প্রত্মত্ত্ব বিভাগ বাড়ির পুকুরসহ পুরো এলাকাটি পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলে। কথিত বাদামগাছ, যার নীচে বসে কবি কবিতা লিখতেন তার বাঁধানো গোড়াটি এখন ফাটল ধরে নদীভাঙনে ভেঙে পড়েছে। যে বজরায় কপোতাক্ষ নদীতে কবি সস্ত্রীক অবস্থান করেছিলেন সাত দিন। সেখানে একটি পাথরের খোদাই করে লেখা আছে ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে’। কবিতা সংবলিত এই জায়গাটি ‘বিদায় ঘাট’ নামে খ্যাত। কবি মধুসূদনের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি ঘিরে রয়েছে অনেক স্মৃতি অনেক বেদনা কাহিনী। কিন্তু পর্যটকদের দেখার সুযোগ নেই।

১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির জন্মদিনে মধুমেলা উদ্বোধন করেন এবং সাগরদাঁড়িকে ‘মধুপল্লী’ হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু দীর্ঘ দু’দশকেও এর কোনো কার্যক্রম এখনও শুরুই হয়নি। এখানে প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু এখানে কোনো পিকনিক স্পট ও বিশ্রামাগার না থাকায় তাদের পোহাতে হয় ঝামেলা। কবির বাড়িকে ঘিরে সাগরদাঁড়িকে এখনও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এর ফলে একদিকে সরকার যেমন লাভবান হবে তেমনই বাংলা সাহিত্যে সনেটের প্রবর্তক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত আরও বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আর্কাইভ

December 2019
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930

Weather

booked.net




© All Rights Reserved – 2019-2021
Design BY positiveit.us
usbdnews24