বলিউডের বেড বয় খ্যাত অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত। ব্যক্তিগত জীবন এবং ক্যারিয়ারের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ৩৭ বছরের বলিউড-ক্যারিয়ারে সাঞ্জু বাবা এখনো সমান জনপ্রিয়। সব তারকার জীবন যখন প্রেম-বিচ্ছেদ-স্ক্যান্ডেলেই সীমাবদ্ধ সেখানে সঞ্জয় দত্তের নামের সাথে জড়িয়েছিলো মাদক, সন্ত্রাস, সিরিজ বোমা হামলায় সহযোগিতার মত ভয়ানক অভিযোগ।
কিশোর বয়স থেকেই মাদক নিতেন সঞ্জয়। নিজেই স্বীকার করেছেন, এমন কোনও ড্রাগ নেই, যা তিনি পরখ করেননি। একবার এলএসডি-তে বুঁদ সঞ্জয় দেখেন, বাবা সুনীল দত্তের মাথা থেকে আগুন বার হচ্ছে। বাবার মুখ গলে যাবে ভয়ে তিনি আগুন নেভাতে তার ওপর লাফিয়ে পড়েন।
এদিকে, আরেকটি ভয়ঙ্কর নেশা ছিলো সঞ্জয়ের, সেটা হলো অস্ত্র সংগ্রহ। উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শিবসেনা সঞ্জয়ের পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিলে সঞ্জয় দত্ত মাফিয়াদের কাছে অস্ত্র চান। দুবাই ভিত্তিক মাফিয়া আবু সালেম সঞ্জয় দত্তের বাসায় এসে তাকে অস্ত্র দিয়ে যান। মুম্বাই নগরীতে সিরিজ বোমা হামলার পর মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন চালাতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে সঞ্জয় দত্ত মাফিয়াদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়েছেন। অবশেষে গ্রেপ্তার হন সঞ্জয় দত্ত।
সেখানে পুলিশ হেফাজতে মুম্বাই নগরীর পুলিশ কমিশনার মি. সামরার সন্মুখে জবানবন্দী দিতে লাগলেন গ্রেফতার হওয়া সঞ্জয়।
তিনি বলেন,
“ছোটবেলা থেকেই পিস্তলের প্রতি আমার নেশা ছিলো। আমার কাছে তিনটি লাইসেন্স করা পিস্তল আছে। ইয়ালগার মুভির ইউনিটের সাথে যখন আমি দুবাই গেলাম, তখনই দাউদ ইব্রাহীম ও আনিস ইব্রাহীমের সাথে আমার পরিচয় হয়। আনিস ইব্রাহীম প্রতিদিন আমার শ্যুটিং স্পটে আসতেন। দাউদ ইব্রাহীম মাঝে মাঝে তার বাসভবন হোয়াইট হাউজে আমাদেরকে নিমন্ত্রণ করতেন। আমরা যেতাম সেখানে। সেখানে পরিচয় হয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্যতম সদস্য দাউদের সহযোগী ইকবাল মিরচি, শারদ শেঠী ও ছোটা রাজনের সাথে।
মুম্বাই ফিরে আসার পরই দাঙ্গা হয় শহরে। আমাদের পরিবারকে হুমকি দেয় শিবসেনা। আমি পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম, কিন্তু তাদেরকে সহযোগিতাপূর্ণ মনে হয়নি। বাধ্য হয়ে আনিস ইব্রাহীমের কাছে অস্ত্র চাইলাম। আবু সালেম মারফত আমি তিনটি একে-৫৬ ও অল্প কিছু হ্যান্ড গ্রেনেড পাই।
দাঙ্গা শেষ হওয়ার পর আমি অস্ত্রগুলো ফেরত দিতে চাইলাম। আবু সালেম কিংবা তার আরও দুই সহযোগী সামির-হানিফ কেউ সেগুলো ফেরত নিতে আসেনি। আমি পুলিশকেও জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভয়ে আর মুখ খুলতে সাহস হয়নি।
আমি মরিশাসে শ্যুটিং করার সময় শুনতে পাই সামির-হানিফ গ্রেফতার হয়েছে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। পত্রিকায় খবর বেরুলো, আমি সিরিজ বোমা হামলায় জড়িত। আমার বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমি মাফিয়াদের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করেছি কিনা। আমি মিথ্যা বললাম তাকে। আমি বাবাকে বললাম, আমার সাথে মাফিয়াদের কোনো যোগসূত্র নেই। কিন্তু মরিশাস থেকেই বন্ধু ইউসুফ নুলওয়ালাকে নির্দেশ দেই, আমার বাসায় গিয়ে অস্ত্রগুলো পুড়িয়ে ফেলতে। ইউসুফ নুলওয়ালা আমাকে জানিয়েছে, সব অস্ত্র সে পুড়িয়ে দিয়েছে।”
এটুকু বক্তব্য শোনার পর পুলিশ কমিশনার মি. সামরা তার অধস্তনদের নির্দেশ দিলেন, সঞ্জয় দত্তকে অস্ত্র আইনে গ্রেফতার না করে, টাডা (Terrorist and Disruptive Activities (prevention) Act) আইনে গ্রেফতার করতে।
কিছু সত্য কিছু ষড়যন্ত্র মিলিয়ে দীর্ঘদিন তাকে কারাবাসও করতে হয়েছে। কিন্তু অভিনয় থেকে একচুলও বিচ্যুত হননি এই তারকা। যখনই ফিরেছেন মুন্না ভাইয়ের মত কোটি দর্শকের মন জয় করেছেন।
Leave a Reply