খুলনায় আমন ক্ষেতে কারেন্ট পোকা নামে পরিচিত বাদামি গাছ ফড়িংয়ের (বিপিএইচ) আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ধান কাটার আগ মুহূর্তে এ পোকার আক্রমণে উদ্বিগ্ন কৃষকরা। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অবস্থা অতটা গুরুতর নয়।
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ৫নং ভান্ডারকোট ইউনিয়নের ঘিনিরাবাদ বিলের প্রায় ৪০০ বিঘা জমির রোপা আমন ধান শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। পোকার আক্রমণ দেখা দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও আলো-বাতাস কম থাকে এমন জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়। প্রাথমিক অবস্থায় কীটনাশক ছিটিয়ে এটি দমন করা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বটিয়াঘাটা উপজেলার ভান্ডারকোট ইউনিয়নের ঘিনিরাবাদ বিলে প্রতি বছর নাবি রোপা আমন ধান চাষ করা হয়। এ বছর হঠাৎ করে ‘কারেন্ট’ পোকার ব্যাপক আক্রমণে ধান গাছ শুকিয়ে মরে গেছে। কৃষকের ধানের স্বপ্ন সব চিটেয় পরিণত হয়েছে। কারেন্ট পোকা ধান গাছের গোড়ায় বসে রস চুষে খেয়ে ফেলেছে। ফলে গাছ পুড়ে খড়ের মতো হয়ে গেছে।
ভান্ডারকোট গ্রামের ইবাদুল শেখ জানান, ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। কারেন্ট পোকার আক্রমণে আমার সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি বলে জানান তিনি।
ভান্ডারকোট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আলম চরম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ঘিনিরাবাদ বিলের সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে, বন্যার পরে ধান গাছ পুড়ে লাল হয়ে গড়পড়তা মরে গেছে। গাছে ধানতো নেই, বরং এর কুটো (খড়) গরু খাচ্ছে না। আশপাশের কয়েকটি বিলের একই অবস্থা বলে জানান তিনি।
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, বটিয়াঘাটা উপজেলায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ তেমন না। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর প্রভাবে ধানের জমিতে পানি জমে ছিল। আমাদের স্থানীয় জাতে চাষ হয়। এখানে পানি জমে থাকে। তাই একটাই চাষ হয়। এবার ঝড়ের আঘাতে পানি বেশি জমেছে। জমার ফলে জমিতে কিছুটা আক্রমণ হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি মোটামুটি যে গুলোতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়নি। সে গুলোতে ওষুধ স্পে করার পরে স্টক হয়ে রয়েছে। উপজেলায় ধান ইতি মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ কাটা হয়ে গেছে। ধানে প্রথমদিকে আক্রমণ হয়েছিল সেটি শুধুমাত্র বুলবুলের কারণে হয়েছে। অন্য বার এমন হয় না।
তিনি বলেন, কারেন্ট পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের রবি ফসল ভুট্টা, সূর্যমুখী, সবজি বীজ দেওয়া হবে। যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা ধরেই এই সহযোগিতা করা হবে।
কৃষকদের অভিযোগ মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা ব্লকে যান না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভান্ডারকোট ইউনিয়নের ঘিনিরাবাদ বিলে আমি নিজেই অনেক বার গিয়েছি। সেখানে বড় করে কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবস পালন করেছি। কৃষকদের লিফলেট দিয়ে তাদের সব তালিকাও নিয়ে এসেছি। পরপর দুই সপ্তাহ ওপর মহলের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়েছে। আমাদের এসএও আছে। আমরা সেখানে ৩শ কৃষকের নিয়ে প্রগ্রাম করেছি বলে জানান তিনি।
Leave a Reply