দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তাতে ক্ষুদ্ধ জনগণ ‘গণভবনের’ নাম পরিবর্তন করে ‘সান্ত্বনা ভবন’ নামে ডাকতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আ্যডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে, ইতোপূর্বে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানদেরও গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিল। তাকে উদ্ধার এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজও ইলিয়াস আলীর পরিবার তার সন্ধান পায়নি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির মা-বাবাও গণভবনের আশ্বাস পেয়েছিলেন। বিশ্বজিৎ এর মা-বাবা, নুসরাতের মা-বাবা, তনুর বাবাকেও গণভবনে ডেকে নিয়ে বিচারের গ্যারান্টি ও সান্ত্বনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওইসব মামলার কী পরিণতি হয়েছে দেশবাসী তা ভালো করেই জানে।’
ভোটারবিহীন ও জবাবদিহিতাহীন বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের শোষণ, জুলুম ও অপশাসনে সমাজ, রাষ্ট্র, চিন্তা-চেতনায় যে পচন ধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড তারই বহিঃপ্রকাশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেছেন, ‘অবৈধ চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসই ছিল আবরার ফাহাদের অপরাধ। আবরার বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে, বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে কথা বলায় এ দেশীয় তাবেদাররা তাকে সহ্য করতে পারেনি। আর পারেনি বলেই আবরারকে নির্মমভাবে হত্যা করে আধিপত্যবাদী অপশক্তি বাংলাদেশের বিরোধী গোষ্ঠীকে একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছে। তাই আবরারের মৃত্যু কোনও সাধারণ মৃত্যু নয়। তবে আবরারের মৃত্যু দেশপ্রেমিক জনগণকে সাহসিকতার সাথে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান আওয়ামী জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। এই বার্তা থেকেই বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ আবরার হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে।’
ভারতের সাথে ‘অবৈধ’ চুক্তি ও বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দল আয়োজিত ওই একটি মিছিল শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবার বিএনপি অফিসের সামনে এসে জড়ো হয়। এসময় সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন রিজভী।
মিছিলে নেতৃত্ব দেয়া রিজভী বলেন, ‘বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা নিছক একটি হত্যাকাণ্ড নয়। আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও চিন্তা চেতনায় যে পচন ধরেছে- আবরার হত্যা তারই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘আধিপত্যবাদী অপশক্তি এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণের আন্দোলনের মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন শহীদ আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদ বর্তমান দুরাচার সরকারের বিরুদ্ধে কেবল বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরই নয়, শহীদ আবরার এখন দেশপ্রেমের প্রতীক।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রায়শই তাঁর নিজের স্বজন হারানোর কথা বলে কাঁদেন। স্বজন হারানোর সুবিধাভোগী হিসেবে তিনি কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনজনকে হারিয়ে আপনি যেমন ব্যথাতুর হন, অন্যদিকে আপনার শোষণ-পীড়নে বাংলাদেশের হাজার হাজার পরিবার আজ সর্বশান্ত, স্বজনহীন-গৃহহীন। তারা নীরবে-নিভৃতে কাঁদেন, কিন্তু তাদের কান্না তো টেলিভিশনে দেখানো হয় না।’
রিজভী বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারের লোকজনের দ্বারা কোনও হত্যাকাণ্ডের পর যখন আর সামাল দিতে পারে না, তখন তারা নাটক তৈরি করে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য সরকার অনুগত প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালায়। হত্যার শিকার হতভাগ্যের পিতা-মাতা বা স্বজনদের গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্ত্বনার নামে প্রহসনের নাটক তৈরি করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ শান্তির গ্যারান্টি দেন বটে, কিন্তু নিহত ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালাতে থাকেন। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকে শিবিরের কর্মী সন্দেহে হত্যা হিসেবে চালানো হচ্ছে। একইভাবে শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠা আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য তার পিতা-মাতাকে ডেকে নেয়া হয় গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আবরার ফাহাদ হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এদেশের জনগণ এখন এই গণভবনের নাম পরিবর্তন করে সেটিকে ‘সান্ত্বনা ভবন’ নামে ডাকতে শুরু করেছে। ডাক্তারের ‘সরি’ শব্দটি যেমন রোগীর স্বজনের কাছে চরম ভয়ংকর, গণভবনের ‘সান্ত্বনা’ শব্দটিও স্বজনহারাদের কাছে তেমনই ভয়ংকর! সান্ত্বনার নামে গণভবনের এই প্রহসন যেন দেশবাসীকে আর দেখতে না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সর্বস্তরের মানুষের অব্যাহত দাবি সত্ত্বেও শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। সরকার দেশনেত্রীকে কোনভাবেই মুক্তি না দিয়ে কারাগারে হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নে জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্য জনসমাবেশে বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করছেন বেগম খালেদা জিয়াকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দি রাখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। অন্যথায় তার সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। জনগণ অন্যায়কারীদের হিসাব রাখছেন। তারা সব কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নিবে। জনগণের ধৈর্য ও সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। মিডনাইট ভোট ডাকাতির পর গোটা দেশের ভোট বঞ্চিত মানুষ এমনভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে যে, গণবিস্ফোরণ শুরু হলে গণভবনের ইট পাথরও থাকবে না।’
জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় মিছিল ও পথসভায় মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম চৌধুরী, অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া, জাকির হোসেন খান, ওমর ফারুক পাটোয়ারী, লোকমান হোসেন হাওলাদার, শাহ আলম, জহিরুল ইসলাম বাশার, এম এ হান্নান, কবির উদ্দিন মাষ্টার, সাইদুল ইসলাম টুলু প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
Leave a Reply