উদ্যানহীন নগরী সিলেট। এই নগরীতে সবেধন নীলমনি ছিলো ‘জালালাবাদ পার্ক’ নামের ছোট্ট একটি উদ্যান। কিন্তু তিন বছর আগে শিশুপার্ক করার জন্য এ উদ্যানের চারদিকে তোলা হয় উঁচু দেয়াল। পরবর্তী সময়ে এখানে শিশুপার্ক নির্মাণ তো হয়ইনি, উল্টো দেয়ালবদ্ধ হওয়ায় উদ্যানটি হারায় তার স্বাভাবিক পরিবেশ। এ অবস্থায় আকর্ষণ থাকলেও উদ্যানমুখী হচ্ছেন না নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে উদ্যানটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডা ও অসামাজিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থলে।
নগরীর কেন্দ্রস্থলে ৯৪ শতক জায়গায় গড়ে ওঠা এ উদ্যানের একদিকে সিলেট সার্কিট হাউজ ও অন্যদিকে জেলা পরিষদ। সামনেই রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ ও আলী আমজাদের বসতবাড়ি। জানা যায়, ২০০৫ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন জালালাবাদ পার্কের স্থলে ১৬তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিবাদ ও নগরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ থেকে সরে আসে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। পরে জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে সংস্কার করে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
সম্প্রতি উঁচু দেয়াল ভেঙ্গে এই পার্কটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে সংক্ষুব্দ নাগরিক আন্দোলন নামের একটি সংগঠন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৮ সালে সিলেট নগরীর পুরনো কারাগারের জায়গায় একটি উন্মুক্ত উদ্যান গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উদ্যানটি হবে ‘নগরীর ফুসফুস’—এ কথাও বলেছিলেন তিনি। কিন্তু নতুন কারাগার নির্মাণ হলেও পুরনো কারাগারের স্থলে উন্মুক্ত উদ্যান এখনো হয়নি। অন্যদিকে জালালাবাদ পার্কেও যাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে সীমানা প্রাচীরের কারণে এ উদ্যানে আস্তানা গেড়েছে মাদকসেবীরা। সন্ধ্যার পর শুরু অপরাধীদের দৌরাত্ম্য।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, জালালাবাদ পার্ককে শিশুদের উপযোগী করে ঢাকার শ্যামলী পার্কের মতো গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। তবে এখন সেই পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়েছে।
এদিকে জালালাবাদ পার্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ সিলেট মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার মতে, দেয়াল তুলে একসময়ের উন্মুক্ত উদ্যানটি এখন কারাগারে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী জালালাবাদ পার্কে আগে জনসাধারণের অবাধ বিচরণ ছিল। সিটি করপোরেশনের গত মেয়াদে আমি প্রায় দুই বছর কারাগারে ছিলাম। এ সময় নাগরিকদের মতামত না নিয়েই উদ্যানটিকে শিশুপার্ক করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু শিশু পার্ক না করে উদ্যানটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। কয়েদখানার মতো বন্দি করে রাখা হয়েছে। তবে শিগগিরই ওই প্রাচীর ভেঙে উদ্যানটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা সিটি করপোরেশনের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
Leave a Reply