মার্কিন নারী পর্যটক জুদিথ বেল্লো। আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে যিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করছেন। তিনি দুবার ইরান ভ্রমণ করেছেন। মার্কিন এই শান্তিকর্মী বিশ্বাস করেন, তার এই ভ্রমণ ছিল ‘আই-ওপেনিং এক্সপ্রিয়েন্স।’ অর্থাৎ বিস্ময়কর ইরান ভ্রমণে জীবনে তিনি নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
‘‘এই কঠিন সময়ে আমাদের আমেরিকা থেকে যত বেশি সম্ভব মানুষ ইরান ভ্রমণে যাওয়া প্রয়োজন। ঘুরে দেখা উচিত, ইরানি জনগণ আমাদের থেকে তেমন ভিন্ন কোনো মানুষ নয়। তারা প্রাচীন ইতিহাসের ধারক-বাহক। এটা কেবল তাদেরই নয়, এটা আমাদেরও বটে।’’ আগস্টে মার্কিন গণমাধ্যম ইউএসএ টুডে’তে প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে তিনি এসব কথা লিখেছেন।
বেল্লো তার এই ইরান অ্যাডভেঞ্চারকে খুবই ফলপ্রসূ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। এই ভ্রমণে ইরানের জনগণকে বন্ধুপ্রতীম ও উদার হিসেবে পেয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
‘‘আমি দুবার ইরান ভ্রমণ করেছি। সঙ্গে একই ডেলিগেশন ছিল। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল খুবই তৃপ্তির। সেখানকার মানুষ বন্ধুপ্রতীম ও উদার। ইরান ঘুরে দেখার পর আপনার ভেতরে সম্পূর্ণ নতুন একটি দৃশ্য অঙ্কিত হবে। যা আপনার আগে থেকে জানা যে কোনো তথ্যকে ছাপিয়ে যাবে। সেখানকার অনেক মানুষ ইংরেজিতে কথা বলে। খাবার-দাবারও চমতকার।’’
তিনি বলেন, ইরানে বহু পুরাকীর্তি রয়েছে। যারা পশ্চিম গোলার্ধ ছেড়ে যায়নি তাদের কাছে এসব পুরাতত্ব ধারণাতীত বিষয়। ‘‘ইরানে একটি আধুনিক জাদুঘর রয়েছে। আরেকটি জাদুঘর রয়েছে যেখানে ভয়ে চমকিয়ে ওঠার মতো রত্ন পাথরের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। আরও আছে মধ্যযুগীয় জুয়েলারী তলোয়ার ও গাউন এবং নাম না জানা আরও কত কী। ইরান মধ্যম আয়তনের দেশ। কিন্তু তাদের রয়েছে দীর্ঘ ও সংরক্ষিত এক ইতিহাস যা অভূতপূর্ব’’ বলেন বেল্লো।
কয়েক হাজার বছর ধরে ইরান সভ্য বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র। সাইপ্রাস থেকে দারিউস থেকে ভারতের মোগল সম্প্রাজ্য পর্যন্ত ইরান মহাবিশ্বের কেন্দ্র ছিল।
‘ইরানের প্রাচীন ধর্ম জরথ্রুষ্টীয়। এটাই ছিল প্রথম ধর্ম। ইরানে কবিতা খুবই জনপ্রিয় এবং কবিরা বিশেষত রহস্যবাদী। তাদের রয়েছে শক্তিশালী ও পরিশীলিত এক চলচ্চিত্র শিল্প। সেই সাথে অনেক গণতান্ত্রিক উপাদানের সমন্বয়ে রয়েছে জটিল এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা।’’
তেহরানের পিস মিউজিয়াম পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বেল্লো মন্তব্য করেন, ‘‘তেহরান পিস মিউজিয়াম আন্তর্জাতিক পিস মিউজিয়াম নেটওয়ার্কের একটি অংশ। এটি হিরোশিমা পিস মিউজিয়ামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। প্রাথমিকভাবে ইরান-ইরাক যুদ্ধে আহত হওয়া অক্ষম প্রবীণরা এটা পরিচালনা করেন। তাদের মতো অনেক প্রবীণ যারা শান্তি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল তারা মনে করেন, যুদ্ধ কোনো পথ নয়। টক্সিক গ্যাস আক্রমণের ভুক্তভোগীদের চিকিৎসায় ভালো একটি উপায় বের করায় মূলত এই শান্তি আন্দোলনের মিশন। ইরানের বিরুদ্ধে সাদ্দাম হোসেন এই অস্ত্রটি বারবার ব্যবহার করেছিল।’’
‘‘আমাদের সবিশ্বের বাইরে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে আমাদের সবারই কিছু না কিছু শেখার আছে। বর্তমান এই কঠিন সময়ে আমেরিকা থেকে যত বেশি সম্ভব মানুষ ইরান যাওয়া প্রয়োজন এবং দেখা প্রয়োজন, ইরানি জনগণ আমাদের চেয়ে তেমন ভিন্ন কিছু নয়। তারা এক প্রাচীন ইতিহাসের ধারক-বাহক। এটা কেবল তাদেরই নয়, এটা আমাদের সবারই।’’
বেল্লো ইরান ও আমেরিকার মধ্যকার সাম্প্রতিককালের বিরাজমান উত্তেজনা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি আশা করেন, যুদ্ধ নয় চূড়ান্তভাবে সংলাপের মধ্য দিয়েই এই উত্তেজনা শীতল হবে। ‘‘আমি অকপটে আশা করি আমাদের সরকার ইরানিদের সাথে সমস্যা সমাধানে শক্তি প্রয়োগের পরিবর্তে কূটনীতির ব্যবহার করবে।’’
অনেক পর্যটকেরই ইরান ভ্রমণে আসার পর নতুন উপলব্ধি তৈরি হয়। মূলধারার পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইরানকে যেভাবে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয় ভ্রমণে আসার পর তাদের সেই ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যায়। দৃষ্টানস্বরূপ অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক ইন্টারপিড ট্রাভেলের বৈশ্বিক পণ্য ও অপারেশন ম্যারেনজার জেনি গ্রে’র ইরান ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করা যায়। তিনি এই বছরের শুরুর দিকে বলেছিলেন, ইরানকে প্রায়ই অনভিপ্রেত হিসেবে চিত্রিত করা হয। কিন্তু বাস্তবে সম্পূর্ণ বিপরীত। ইরানিরা তাদের দেশকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে খুবই অতিথীপরায়ণ, বন্ধুপ্রতীম ও আকুল আকাঙ্ক্ষী। আমাদের পর্যটকদের প্রতিক্রিয়াই এর স্বাক্ষী।
Leave a Reply