যুক্তরাজ্যে ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা বাড়াতে বিনামূল্যে টেলিভিশন চ্যানেল শুরু করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে দেশটির একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তারা জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
ব্রিটিশ ফিউচার নামে ওই সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা এই প্রকল্পে উপকৃত হবেন। ব্রিটিশ নাগরিকত্বের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীরাও এতে করে যুক্তরাজ্যের জীবনযাত্রা ও মূল্যবোধ সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন।
চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত ‘স্পিকিং আপ: দ্য কেস ফর ইউনিভার্সল ফ্লুয়েন্সি ইন ইংলিশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে সংগঠনটি জানায়, ‘আগামী চার বছরের জন্য ইংলিশ টু স্পিকার্স অব আদাল ল্যাংগুয়েজ (ইএসওএল) প্রকল্পে প্রতি বছর ১৫ কোটি পাউন্ড বরাদ্দ বাড়ানো উচিত ব্রিটিশ সরকারের। চলতি বছরও বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত রাখা দরকার।’
অতিরিক্ত বরাদ্দকৃত অর্থে বিনামূল্যে দেখা যাবে এমন ইংরেজি শেখার টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা এবং ইংরেজি শেখানোর কাজে নিয়োজিত ক্লাবগুলোকে সহায়তা করা। বছরে ১ কোটি পাউন্ড শুধু উদ্ভাবনেই বরাদ্দ রাখা উচিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইংরেজি বলতে পারলে অভিবাসীরা ভালো চাকরি করতে পারবেন এবং খুব তাড়াতাড়ি স্থানীয়দের অংশ হয়ে যেতে পারবেন।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে বসবাসরত ৮ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ইংরেজি বলতে পারেন না, যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০১১ আদমশুমারির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সরকারি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অভিবাসীদের মধ্যে বাংলাদেশিরা ইংরেজি ভাষা নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। অর্ধেকেরও কম (৪৭.৯) শতাংশ বাংলাদেশি প্রধান ভাষা হিসেবে ইংরেজি ব্যবহার করতে পারেন। ১৩ দশমিক ২ শতাংশ ইংরেজি বলতে পারেন তবে খুব ভালো নয়। আর ৩ শতাংশ একদমই ইংরেজি পারেন না।
ব্রিটিশ ফিউচারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকজন অভিবাসীরা শিখতে পারেন না কারণ তাদের ক্লাস করতে টাকা লাগে এবং পড়াশোনার জন্য কোনও কর্মক্ষেত্র থেকে কোনও ছাড় পান না। এছাড়া যারা দীর্ঘ সময় কাজ করেন এবং দিনে সময় বের করতে পারেন না তাদের পক্ষে ক্লাস করাও কঠিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্যান্য দেশ বিনামূল্যে সম্প্রচারিত টেলিভিশনে ভাষা শিক্ষা দিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে। এই সম্প্রচারমাধ্যমগুলোর বার্ষিক ব্যয় ২০ লাখ পাউন্ডের চেয়েও কম। রয়েছে বিজ্ঞাপনী আয়ও। এছাড়া ব্রিটিশ জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি জানাতে ওই চ্যানেলে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা যেতে পারে। ক্লাসিক কমেডি ও নাটক থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানও হতে পারে।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাকার সময় জনসন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি যুক্তরাজ্যের সবাইকে ইংরেজি বলার ব্যাপারে দক্ষ করে তুলবেন। তিনি এই পদক্ষেপকে ‘সাধারণ প্রবৃত্তি’ বলে অভিহিত করেছিলেন তখন।
ব্রিটিশ ফিউচার নামে স্বাধীন এই সংগঠনটি অভিবাসন নিয়ে কাজ করছে এবং তারা বিশ্বাস করে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা নিয়ে বিতর্ক শুধু শুধু অনেকদিন থেকেই চলে আসছে। প্রতিবেদনের শেষে তারা বলেছে, ‘যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী সবাই ইংরেজিতে কথা বলবেন কিংবা শিখে নেবেন এটা সবাই আশা করে। তাহলে আমাদের সবকিছু এক করে এই সংশ্লিষ্ট একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
Leave a Reply