বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন

নোটিশ :
Welcome To Our Website...
একবসায় ২ কেজিরও বেশি কাঁচামরিচ খান মোবারক মোল্লা

একবসায় ২ কেজিরও বেশি কাঁচামরিচ খান মোবারক মোল্লা

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের হলিদাগাছী গ্রামের বাসিন্দা মোবারক মোল্লা। হলিদাগাছীসহ আশপাশের গ্রামের লোকজন তাকে ‘মরিচ খাওয়া মোবারক’ নামেই চেনেন।

কারণ তিনি একটার পর একটা কাঁচামরিচ খান সুস্বাধু ফল খাওয়ার মতো করে। আগে এলাকার লোকজন মোবারক মোল্লার সঙ্গে মরিচ খাওয়া নিয়ে বাজি ধরতেন।

কিন্ত এখন আর কেউ সেই সাহস পান না। কারণ বাজি ধরলেই নিশ্চিত পরাজয়। মরিচ খাওয়াটা যে তার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়; এটি আজ সবাই জানেন।

একটি বা দুটিও নয়, পেট না ভরা পর্যন্ত মোবারক মোল্লা মরিচ খেতে পারেন। মোবারকের কথায়, তার কাছে মরিচের স্বাদ চকলেটের মতো। তাই কারও বাড়ি বেড়াতে গেলেও মোবারক নাস্তার বদলে কাঁচামরিচই চেয়ে খান।

চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছী পশ্চিমপাড়া গ্রামে মোবারকের বাড়ি। তার বয়স এখন প্রায় ৭০ বছর। তিন মেয়ে আর এক ছেলের বাবা তিনি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকেও বিয়ে করিয়েছেন।

এখন স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ এবং দুই নাতি-নাতনির সঙ্গে থাকেন মোবারক মোল্লা। এক যুগ হলো মোবারক মোল্লা কোনো কাজ করেন না। তবে সেই ছেলেবেলায় যে মরিচ খাওয়ার নেশাটা জন্মেছিল তা এখনও আছে। শুধু মরিচ খাওয়ার এই ক্ষমতার কারণে এলাকার সব মানুষই তাকে চেনেন।

সম্প্রতি মরিচ খাওয়া মোবারক মোল্লার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। কথার ফাঁকে বাড়িতে মরিচ খাওয়ার আয়োজন করা হলো। মোবারক মোল্লার বাড়ির উঠানে প্রতিবেশীদের ভিড় জমে গেল।

এক থালা কাঁচামরিচ বের করে দিলেন পুত্রবধূ নাসিমা বেগম। কচমচিয়ে চিবিয়ে একটার পর একটা মরিচ খাওয়া শুরু করলেন মোবারক। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই কমপক্ষে এক কেজি মরিচ সাবাড় করলেন তিনি।

এবার বাধা দিলেন স্ত্রী জাহানারা বেগম। বললেন, বয়স হয়েছে। থাক আর খেতে হবে না। পেটের সমস্যা হতে পারে। মরিচখাদক মোবারক থামলেন। তার পর একটা হাসি দিলেন।

এ হাসিতে প্রমাণ করলেন নিজের মরিচ খাওয়ার সক্ষমতার কথা। মোবারক মোল্লা কাঁচামরিচকে বলে থাকেন ‘গাছ মরিচ’। এতগুলো মরিচ খেতে কেমন লাগল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, লজেন্সের মতো। ঝাল লাগে না, জবর লাগে।’

মরিচ খেয়ে কোনো সমস্যা হয় কিনা জানতে চাইলে মোবারক বলেন, ‘আমি অসুস্থ হই না, মরিচ খেলেই আমার সব অসুখ ভালো হয়ে যায়।’

মরিচ খাওয়ার শুরুর গল্পটাও শোনালেন মোবারক। তার ভাষ্যমতে, ছোটবেলায় একদিন মাঠে কাজ করছিলেন। হঠাৎ একটা গাছে দেখেন অনেক বড় বড় কাঁচামরিচ। মোবারক একটা মুখে দেন। তারপর দেখেন, ঝাল লাগছে না। নিজেই অবাক হন মোবারক। যারা সঙ্গে ছিলেন তাদের বিষয়টি জানালেন মোবারক। কেউ বিশ্বাস করতে চাইল না। তারা চ্যালেঞ্জ করে বসল। মোবারক তাদের মরিচ খেয়ে দেখিয়ে দিলেন। সেই থেকেই শুরু এভাবে মোবারকের প্রিয় খাবারের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে কাঁচামরিচ।

মোবারক বলেন, আমি এখন পর্যন্ত একবসায় সর্বোচ্চ দুই কেজি মরিচ খেয়েছি। এর বেশিও পারব। কিন্তু কেউই সাহস করে দেয় না। প্রথম প্রথম খেতে দিত সবাই। এখন সবাই জানে, তাই আর কেউ খেতে দেয় না। বাজারের সবজি বিক্রেতারা আগে বলত, যত পারেন খান। এখন দেয় না।

তিনি বলেন, একবার গাছ মরিচের দাম ২০০ টাকা কেজি হলো। তখন বাড়িতে কেউ খেতে দেয় না। আবার কোনো বাড়িতে গিয়ে চাইলেও দেয় না। আমার তো মরিচ না খেলে ভালো লাগে না। তাই একদিন এক দোকানে গিয়ে বললাম, আপনার দোকানের মরিচ দেখেই মনে হচ্ছে ঝাল না। দোকানদার বললেন, ঝাল না তো একটা খেয়ে দেখেন। তখন আমি একের পর এক খেতে লাগলাম। একটু পর দোকানদার আর খেতে দিলেন না।

মোবারক মোল্লার স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, আমার বিয়ের আগে থেকেই শুনেছি উনি মরিচ খেতে পারেন। তখন বিশ্বাস করতাম না। বিয়ের পর দেখলাম সত্যিই তাই। সবসময়ই মরিচ খায়।

পুত্রবধূ নাসিমা বেগম বলেন, আমার বাপের বাড়ি নাটোরের সিংড়া। আমার শ্বশুর সেখানে গেলে নাস্তা দেয়া হয়। কিন্তু তিনি বলেন, মরিচ থাকলে দেন। তিনি মরিচই খান। এখন এই এলাকার সবাই আমাকে ‘মরিচ খাওয়ার বেটার বউ’ বলে চেনে।

মরিচ খেয়ে দেখিয়ে বাজিতে সবাইকে পরাজিত করে আনন্দ পান মোবারক। কিন্তু এখন আর কেউ মোবারকের সঙ্গে বাজি ধরেন না।

মোবারক বলেন, একবার এক বাড়িতে মরিচ খেতে চাইলাম। কয়েকটা খাওয়ার পর বাড়ির লোকজন বলল, আমি নাকি গিলে খাচ্ছি। তাই বললাম পাটায় মরিচ বেটে আনতে। তারা আনল। সেই মরিচও খেয়ে দেখালাম। এখন কেউ ভুল করেও মরিচ খাওয়া নিয়ে আমাকে চ্যালেঞ্জ করে না। মরিচই আমার ভালো লাগে। স্ত্রীর দিকে ইশারা করে মোবারক বললেন, ও এখন বেশি খেতে দেয় না।

মোবারক মোল্লাকে মরিচ কেন ঝাল লাগে না, জানতে চাইলে পুষ্টিবিদ আনসিয়া পারভিন সুরভি বলেন, কাঁচামরিচে ক্যাপসাসিন নামে একটি পদার্থের উপস্থিতির জন্য ঝাল লাগে। মানুষের জিহ্বার প্রতি মিলিমিটারে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার স্বাদগ্রন্থি থাকে। এই স্বাদগ্রন্থির মাধ্যমে ক্যাপসাসিন ভেতরে ঢুকে ঝাল লাগে। কিন্তু জিহ্বায় স্বাদগ্রন্থি কম থাকলে ঝাল কম লাগবে। যেমন পাখিদের জিহ্বার প্রতি মিলিমিটারে মাত্র চারশ থেকে পাঁচশ স্বাদগ্রন্থি থাকে। তাই তাদের ঝাল লাগে না।

সৌজন্যে : যুগান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আর্কাইভ

August 2019
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

Weather

booked.net




© All Rights Reserved – 2019-2021
Design BY positiveit.us
usbdnews24