কাশ্মীরিদের পশুর মতো বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য বিলুপ্ত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা জাভেদ।
তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে লেখা এক চিঠিতে এ মন্তব্য করেন।
তিনি লেখেন, কাশ্মীরিদের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। মৌলিক মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কাশ্মীরিরা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে কাশ্মীরি নাগরিকরা অকল্পনীয় নিপীড়নের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছেন।
এবারের ঈদে কাশ্মীরের বিখ্যাত জামা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছিল ভারত। অনেক কাশ্মীরি ঈদের নামাজই পড়তে পারেননি। জুম্ম-কাশ্মীর বা লাদাখে কড়া নিরাপত্তার মধ্য রাখা হয়েছিল। ঈদের আগে যে কয়টি পশুর হাট বসেছিল সেগুলোও ছিল প্রায় ক্রেতাশূন্য।
চিঠিটি একটি অডিওবার্তা আকারেও প্রকাশ করেছেন ইলতিজা।
চিঠিতে ইলতিজা জানিয়েছেন, বাড়িতে কেউ এলে তাদের গেট থেকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি এ খবরটুকুও তার কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে না। তাকে বাড়ির বাইরে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। এভাবে গৃহবন্দি হয়ে ঈদ ও স্বাধীনতা দিবস পালন করতে হয়েছে তাকে।
চিঠিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গৃহবন্দি হওয়ার কারণ জানতে চেয়েছেন তিনি।
মেহবুবা মুফতির মেয়ে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে এক নাগরিকের কি অকল্পনীয় নিপীড়নের কথা বলারও অধিকার নেই? এটা এক ধরনের করুণ বিদ্রুপ যে, অস্বস্তিকর সত্য বলার কারণে আমার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে।’
তার সঙ্গে অপরাধীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান মেহবুবা মুফতির মেয়ে।
তিনি বলেন, আমি সর্বক্ষণ নজরদারিতে রয়েছি। যারা মুখ খুলেছে, সে সব কাশ্মীরির মতো আমারও প্রাণহানির শঙ্কা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকারের কারণেই তাকে আটকে রাখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ইলতিজা।
প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়। এ কারণে সায়ত্তশাসন হারায় কাশ্মীরিরা। সেখানে কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা নন এমন নাগরিকদের সম্পত্তি কেনা ও বিয়ে করার সুযোগ করে দিয়েছে ভারত। এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে কাশ্মীরিরা। তারা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে।
অবরোধ চলছে এখনও। এদিকে ওই দিনটি থেকে কাশ্মীরের টেলিফোন লাইন, ইন্টারনেট ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে রেখেছে দিল্লি এবং লোকজনের অবাধ চলাচল ও জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। গত ৪ আগস্ট প্রথমে দুইজন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আব্দুল্লাহসহ কয়েকশ’ কাশ্মীরি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া, আরেক নেতা শাহ ফয়সালকে গত বুধবার (১৪ আগস্ট) দিল্লি বিমানবন্দর থেকে আটক করে শ্রীনগরে ফেরত পাঠানো হয়। সেখানে গৃহবন্দি আছেন তিনি।
Leave a Reply