বুধবার, ১৬ Jul ২০২৫, ১১:৩৩ অপরাহ্ন

নোটিশ :
Welcome To Our Website...
আজকের সংবাদ শিরোনাম :
সিলেট-৬ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীদের মিলনমেলা

সিলেট মহানগর যুবদল সহ সভাপতিদের অভিনন্দন

যুক্তরাজ্য যুবদলের সহ সভাপতি নির্বাচিত হলেন শামীম তালুকদার

১২ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আগামী বছরের ৩০ জুনের পর দায়িত্বে থাকবেন না ড. ইউনূস : প্রেস সচিব সরকার প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর: প্রধান উপদেষ্টা ভারতের পুশইন উসকানি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ১ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৩ জন খালাস

শুল্কমুক্ত হচ্ছে আরও ১০০ পণ্য

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত ভারত-পাকিস্তান
কষ্ট পুষে রাখা মানুষটির আজ জন্মদিন

কষ্ট পুষে রাখা মানুষটির আজ জন্মদিন

এক বছরও হয়নি। ১৮ অক্টোবর ২০১৮। সকাল থেকেই ছড়িয়ে পড়ল খবরটা—আইয়ুব বাচ্চু নেই! বেলা বাড়তেই হাসপাতাল লোকারণ্য। চট্টগ্রামের শেষযাত্রার আয়োজনে জনসমুদ্র। এত বিষণ্নতা নিকট অতীতে দেখেনি ব্যান্ড সংগীতের সাম্রাজ্য। শুধু কি সাম্রাজ্য? ফিকে হয়ে গেল এ প্রজন্মের ব্যান্ড সংগীত অনুরাগীদের ছেলেবেলা! চলে গেলেন ‘গিটারের জাদুকর’! এই শোক কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে দেশের ব্যান্ড সংগীতাঙ্গন? আপামর সংগীতপ্রেমীর দল? মাত্র ছাপ্পান্নতেই সব শেষ!

 

ক্যালেন্ডারের পাতায় যদি সেই দিনটি না থাকত, ১৮ অক্টোবর ২০১৮? তাহলে আজ তিনি পূর্ণ করতেন ৫৭, পড়তেন ৫৮তম বছরে। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে মাত্র ছাপ্পান্ন বছরের সময় হাতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। বাবা চেয়েছিলেন ছেলের এমন একটা নাম হবে, যা অন্য কারও নেই। যেমন আইয়ুব আলী, আইয়ুব হোসেন—এমন তো হয়-ই। দুটি নাম থেকে আলাদা অংশ নিয়ে রাখা হলো, আইয়ুব বাচ্চু। সেই থেকে তিনি হলেন ‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি’।

 

মা-বাবার আদরের ছেলে। তাই বলে যে সংগীতচর্চার জন্য খুব একটা অনুকূল পরিবেশ তিনি পেয়েছিলেন, তা কিন্তু নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই সংসারে থেকেও বোহিমিয়ান আইয়ুব বাচ্চু। বাউন্ডুলে স্বভাবের জন্য সংসারের কিছুই যেন স্পর্শ করতে পারছিল না তাঁকে। বাবার ব্যবসায় মন বসে না, লেখাপড়ায় মন বসে না। অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ ছিল তাঁর।

 

তবে প্রতিভা, এমনকি তার চেয়েও বড় কোনো শব্দ দিয়ে যদি ব্যাখ্যা করা যায়, তবে আইয়ুব বাচ্চু তা-ই। মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ১৯৮৩ সালে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। উঠেছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের এক হোটেলে। এরপর বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তারকা হয়ে উঠলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে অগুনতি দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তাঁর সঙ্গে। তাঁর গিটারের ঝংকারে বিদ্যুৎ বয়ে যেত তরুণ-তরুণীদের শিরা-উপশিরায়। ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ‘বস’। কারও কাছে ‘স্যার’।

 

মূলত রক ঘরানার গান করতেন। শ্রোতাদের কাছে ইংরেজি গান, হার্ড রক, ব্লুজ, অলটারনেটিভ রক নিয়ে গেছেন শুরু থেকে। ব্যান্ড সংগীতের প্রতি তারুণ্যের জোয়ারের ধারা ধরে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর অনুপ্রেরণা জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুর—এমন অনেকেই।

 

কিন্তু শুধু রক বা ব্যান্ডের গানে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। আধুনিক গান, লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। লোকগান নিয়ে একটি অ্যালবাম রিমেক করেছেন তিনি এবং সেখানে শ্রোতাদের প্রচুর সাড়া মিলেছে। খুব অল্প গান করেছিলেন চলচ্চিত্রে। কিন্তু সেই অল্প কটি গানই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

অথচ হাসতে দেখা, গাইতে দেখা আইয়ুব বাচ্চুর এক বুকভরা বেদনা ছিল। যাঁরা তাঁর খুব কাছের ছিলেন, তাঁরা হয়তো কেউ কেউ জানেন। আর গানে গানে তো তিনি কতবারই বলেছেন, শ্রোতাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন নিজের অপ্রকাশিত বেদনা। তাঁর গানের সুর ও গায়কিতে ছিল অভিমান! ‘…আর কত এভাবে আমাকে কাঁদাবে আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে’ ঠিক যেন নিজের গানের এই কটি লাইনের মতোই ছিল তাঁর জীবন। আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, বন্ধুত্ব ছিল—এমন বেশ কয়েকজন গীতিকার, সুরকারের মতে, আইয়ুব বাচ্চু খুব অভিমানী মানুষ ছিলেন। ভেতরে-ভেতরে অভিমান পুষে রাখতেন। মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সেসব টের পাওয়া যেত। কখনো কখনো কেঁদেছেন। শিশুর মতো ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।

 

 

মায়ের আগে যদি আমি যেতে পারতাম!

গানে, গিটারে ব্যস্ত থাকা মানুষটি আর দশটা মানুষের মতো মায়ের মৃত্যুতে একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর মারা গেছেন তাঁর মা। পল্টনের সেই বাসা থেকে মায়ের মরদেহ বের করা হয়। স্থানীয় মসজিদে নেওয়া হবে জানাজার জন্য। সেখান থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে। আইয়ুব বাচ্চু মায়ের শূন্য ঘরে গেলেন। মায়ের খাটে ঝাঁপিয়ে পড়ে হু হু করে কান্না শুরু করলেন। মায়ের চলে যাওয়াটাই আইয়ুব বাচ্চুর জন্য সবচেয়ে বড় বেদনার ছিল। বিভিন্ন সময়ে তিনি বলেছেন, মায়ের আগে যেতে পারলে তিনি সুখী হতেন। তাঁর ভাষায়, ‘ভালো হতো, মায়ের আগে যদি আমি যেতে পারতাম…। মা যতটুকু সহ্য করতে পারত, আমি তা পারছি না!’ কথায় কথায় তিনি বারবার বলেছিলেন, মা তাঁদের জন্য কতটা সংগ্রাম করেছেন, নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাইয়েছেন।

আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে কথা বলার, সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছিল। সে সুবাদে জেনেছি তাঁর পারিবারিক কিছু বেদনার কথা। একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। একসময় তা আর থাকেনি। ছোট হতে হতে একক পরিবার হয়ে যায়। এটাও তাঁকে তিলে তিলে কষ্ট দিত। তাঁর মতে, সবাই মিলে একসঙ্গে থাকা, এক টেবিলে খাওয়ার মতো আনন্দ আর নেই।

 

সহশিল্পীদের সঙ্গে বিচ্ছেদের কষ্ট

ব্যান্ড গড়ে, ব্যান্ড ভাঙে—এটা একটা প্রচলিত রীতি। যুগে যুগে সব দেশের গানের দলে এমনটা ঘটতে থাকে। কিন্তু এটি আইয়ুব বাচ্চুকে ভীষণ পীড়া দিত। এ প্রজন্ম আইয়ুব বাচ্চুকে মূলত এলআরবি ব্যান্ডের দলনেতা হিসেবেই জানেন। কিন্তু এলআরবির আগে অন্য যেসব ব্যান্ডে ছিলেন, তা থেকে বারবারই তাঁকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সর্বশেষ এলআরবির আগে তিনি ছিলেন সোলস ব্যান্ডে। এই ব্যান্ড থেকেও একবার বেরিয়ে এসেছিলেন। শেষমেশ ছেড়েছিলেন অভিমান নিয়ে। সেই সময়ের গল্পটি গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর কাছ থেকে শোনা। তিনি বলেন, ‘সোলস তখন তুঙ্গে, হোটেল ব্লু নাইলে সোলসের সভা চলছে। একসময় দেখলাম মন খারাপ করে বাচ্চু বেরিয়ে এল। চোখ ছলছল। আমার সঙ্গে সিঁড়িতে দেখা। বলল, “ভাই, সোলস ছেড়ে দিলাম। সোলস থেকে ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’ গানটি চেয়ে নিয়েছি।”’

 

সোলস ছেড়ে ১৯৯০ সালের ৫ এপ্রিল নিজের ব্যান্ড দল প্রতিষ্ঠা করলেন আইয়ুব বাচ্চু, যার নাম রাখলেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। পরবর্তী সময়ে এর নাম বদলে রাখা হয় ‘লাভ রান্‌স ব্লাইন্ড’। সেই বছরই এলআরবি তাদের যাত্রা শুরু করে একটি ডাবল অ্যালবাম দিয়ে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। এই অ্যালবাম দুটির বেশ কিছু গান খুব জনপ্রিয় হয়, যা আজও আমাদের কানে বাজে।

নিজে যেমন বিভিন্ন সময়ে নানান ব্যান্ডের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন, তেমনি এলআরবি গঠনের পর সেটাকেই একটা পরিবারের মতো গড়ে তুলেছিলেন। বলতেন, এটা আমার আরেকটা পরিবার। কিন্তু এই দল থেকেও বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন সদস্য বেরিয়ে গেছেন। দল থেকে বেরিয়ে কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। কি-বোর্ডিস্ট এস আই টুটুলের দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া আইয়ুব বাচ্চুকে মানসিকভাবে আহত করেছিলেন। টুটুলের পর এলআরবি ব্যান্ডে আর কোনো কি-বোর্ডিস্ট নেননি তিনি।

 

গিটারের জন্য চাপাকান্না

সব ছাপিয়ে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন গিটারের জাদুকর। গিটারের টুংটাং শব্দই যেন তাঁর সমস্ত দেহ-মন-সত্তাজুড়ে সারাক্ষণ বিরাজমান ছিল। আইয়ুব বাচ্চু সব সময় বলতেন, গিটার আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। গিটারের জন্যই ঘর ছেড়েছি। নামীদামি সব ব্র্যান্ডের গিটার সংগ্রহ করার নেশা ছিল তাঁর। বিদেশে যখনই যেতেন, স্বনামধন্য গিটারের দোকানে যেতেন। বাজাতেন, কিনতেন। সেগুলো নিয়ে নিত্যদিন ভক্ত, বন্ধু, শিল্পীদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠতেন। অভিজ্ঞতা বিনিময় করতেন। অথচ অপ্রিয় কথা হলো, জীবনের শেষ দিকে এসে আক্ষেপে-অভিমানে গিটারগুলো বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কারণ হিসেবে নিজেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘আমার ভীষণ ইচ্ছে ছিল, আমার গিটারগুলো নিয়ে গিটার বাজিয়েদের সঙ্গে নিয়ে দেশব্যাপী একটি গিটার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করার, যেখানে এই গিটারগুলো বাজিয়ে বিজয়ীরা জিতে নেবে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় একেকটি গিটার! কিন্তু বেশ কিছুদিন চেষ্টা করার পরও কোনো পৃষ্ঠপোষকই পেলাম না…।’

কারণ হিসেবে আইয়ুব বাচ্চু লিখেছিলেন, ‘গিটারগুলো রক্ষণাবেক্ষণ বেশ কষ্টকর। তাই আমি ঠিক করেছি, প্রথম দিকে পাঁচটি গিটার বিক্রি করে দেব তাদের কাছে, যারা গিটার বাজায় কিংবা যারা আমার গিটারগুলো সংরক্ষণে রাখতে চায়…।’

 

শেষ জন্মদিনে

২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট শেষ জন্মদিন উদযাপন করেন ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু। ঠিক উদযাপন বললে হয়তো বাড়াবাড়িই হবে। ঘরোয়া আয়োজন ছিল। তবে কাছের মানুষদের নিখাদ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিল সে আয়োজন। এদিন তিনি বলেছিলেন, ‘এমন কিছু গান করতে চাই, যা আগে কখনো করিনি। এই গানগুলো নিজে লিখব, সুর করব ও গাইব।’ দুই মাস পর সেই আইয়ুব বাচ্চু বিদায় নিলেন হঠাৎ করেই। অনুরাগীদের জন্য এ আক্ষেপ চিরদিন থেকে যাবে। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া ও সুর দেওয়া বহু গান টিকে থাকবে অনেক দিন। সেগুলোর মধ্যে থেকে যাবে অকালে চলে যাওয়া ব্যান্ড সংগীতের এই শিল্পীর নাম।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আর্কাইভ

August 2019
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

Weather

booked.net




© All Rights Reserved – 2019-2021
Design BY positiveit.us
usbdnews24