ঈদুল আজহা সমাগত। মুসলমানদের ঘরে ঘরে এখন চলছে ঈদ উৎসবকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি। গ্রাম কিংবা শহর, নগর সবখানেই চলছে গরু-ছাগলের জমজমাট হাটবাজার। ঈদুল আজহার অন্যতম একটা আমল হলো কোরবানি করা। এ কোরবানি মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে বান্দার জন্য মস্ত এক নেয়ামত। এ নেয়ামতের পথ ধরেই বান্দা তার রবের নৈকট্য লাভ করে থাকে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘(কুরবানীর পশুর) এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছেনা, বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। (সূরা হজ ৩৭)
নবী কারীম সা. সাধারণত নিজে একা কুরবানী করতেন। যেমনটা সাহাবায়ে কেরাম বণর্না করেছেন, হযরত আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই শিং বিশিষ্ট দুটি ধূসর বর্ণের মেষ কোরবানী করেছিলেন। তিনি (জবেহ করার সময়) বিসমিল্লাহ ও তাকবীর বলেছিলেন। আমি তাঁকে নিজের পা সেটির পাঁজরের উপর রেখে চেপে ধরে স্বহস্তে তা কোরবানী করতে দেখেছি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩১২০)
কুরবানীর পশু জবাইয়ের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য অগণিত পূণ্য।যার বর্ণনা পওয়া যায় রাসুল সা. এর বিভিন্ন হাদিসে। যেমন, হযরত যায়দ বিন আরকাম রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আ. এর সুন্নত। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের বিনিময় নেকি হবে। সাহাবাগণ বললেন,দুম্বা ও ভেড়ার পশমের কী হুকুম? তিনি বলেন, দুম্বা ও ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩১২৭)
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.)বলেন, কুরবানির দিন আদম সন্তানের জন্য এমন কোন কাজ নেই যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কুরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কুরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা কুরবানি করো।
(ইবনে মাজাহ ৩১২৬) অপর দিকে যারা সামর্থ্য থাকা সত্বেও কুরবানী করবে না,তাদের প্রতি কঠোর হোঁশিয়ারী উচ্চারণ করে নবী কারীম (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারেকাছেও না আসে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)
প্রথমেই বলেছি, কুরবানী হলো নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পশুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করা। এর বাহিরে অন্য পশু দ্বারা কুরবানী করলে তা গ্রহণ গ্রহণযোগ্য হবে না। আর নির্দিষ্ট পশু হলো মোট ছয়টি। যথা: গরু, মহিষ, উট, দুম্বা, ছাগল, ভেড়া। এগুলোর প্রত্যেকটির জন্য রয়েছে আবার আলাদা আলাদ বয়সসীমা। নির্ধারিত বয়সের কম হলে সে পশু দ্বারা কুরবানী দেয়া যাবে না।
১. উটের নির্ধারিত বয়স পূর্ণ পাঁচ বছর হতে হবে।
২. গরু, মহিষের পূর্ণ দুই বছর হতে হবে।
৩. ছাগল,ভেড়া,দুম্বার পূর্ণ এক বছর হতে হবে। (তবে ৬মাস বয়সের দুম্বা, ভেড়া যদি দেখতে এক বছর বয়সী ছাগলের মত মনে হয় তবে তা দ্বারাও কুরবানী করা যাবে) পশু জবেহ করার সময় যারা ছুরি ধরবে সকলের জন্য ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলা ওয়াজিব। তাদের কোন একজন যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না পড়ে, তাহলে ঐ পশু হারাম হয়ে যাবে এবং তা কারো জন্য খাওয়া জায়েজ হবে না।(ফতওয়ায়ে শামী)
তবে যদি কোন ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে ঐ পশু হালাল হবে এবং কুরবানীও আদায় হয়ে যাবে। জবেহকৃত পশুর ৭টি জিনিস খাওয়া নিষেধ। সেগুলো হলো- পিত্তথলি, মূত্রথলি, পুরুষাঙ্গ, স্ত্রী অঙ্গ, অন্ডোকোষ, চামড়ার নিম্ন ভাগের গুটি ও প্রবাহিত রক্ত। প্রবাহিত রক্ত সম্পূর্ণ হারাম। বাকিগুলো মাকরুহে তাহরিমি।
Leave a Reply