রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:১২ অপরাহ্ন

নোটিশ :
Welcome To Our Website...
অলিম্পিকে সোনাজয়ী এই দৌড়বিদ নারী নাকি পুরুষ?

অলিম্পিকে সোনাজয়ী এই দৌড়বিদ নারী নাকি পুরুষ?

 

কাস্টার সোমেনিয়া নামটি হয়তো আমাদের অনেকের কাছে পরিচিত। বার্লিনে ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন তিনি। এরপর থেকে গত দশ বছর এই দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যাথলেট রয়েছেন গভীর নজরদারির মধ্যে। সোমেনিয়াকে নিয়ে এই তদন্ত কার্যক্রমের পেছনের বিষয়টা কিন্তু বেশ অদ্ভুত!

 

২০০৯ সালের ওই প্রতিযোগিতায় ইতালিয়ান অ্যাথলেট এলিজা কুসমা সোমেনিয়ার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। শেষমেশ ষষ্ঠ স্থান দখল করেন তিনি। সোমেনিয়ার অতিমানবীয় শক্তিমত্তা ও ক্ষিপ্রতা অবাক করে দেয় এলিজাকে। রেস শেষ হওয়ার পর তিনি সোমেনিয়াকে পুরুষ বলে আখ্যায়িত করেন।

 

 

দৌড়াচ্ছেন সোমেনিয়া

 

সোনা জয়ের পরপরই সোমেনিয়ার লিঙ্গ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, সোমেনিয়ার শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। উল্লেখ্য, টেস্টোস্টেরন হলো এমন একটি হরমোন; যা পেশীর পরিমাণ, শক্তি ও অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সোমেনিয়ার রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কত, তখন তা প্রকাশিত করা হয়নি। তবে অধিকাংশ নারী অ্যাথলেটদের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা থাকে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ১২ থেকে ৬১ ন্যানোগ্রাম। অন্যদিকে, পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হয় প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ২৯৫ থেকে ১১৫০ ন্যানোগ্রাম পর্যন্ত।

 

আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী যে সকল মহিলাদের রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৪৫ ন্যানোগ্রামের বেশি থাকে তাদেরকে ইন্টারসেক্স অ্যাথলেট বা ডিফারেন্স অফ সেক্সুয়াল ডেভলপমেন্ট (ডিএসডি) বলে শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে। সে কারণে যেসব নারী অ্যাথলেটের রক্তে হরমোনের মাত্রা ১৪৫ ন্যানোগ্রামের বেশি, তাদেরকে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ৬ মাস আগে থেকে হরমোন সাপ্রেসিং ওষুধ সেবন করে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ১৪৫ এর নিচে নামিয়ে আনতে হয়।

 

 

অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন তিনি

 

যাই হোক, প্রাথমিক স্থগিতাদেশ কাটিয়ে ২০১১ সালে ট্র‍্যাকে ফিরে পরের বছরই ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে নারীদের ৮০০ মিটার দৌড় ইভেন্টে রৌপ্য পদক অর্জন করেন সোমেনিয়া। তার এই রূপা পরবর্তীতে স্বর্ণপদকে পরিণত হয়। যখন জানা যায় স্বর্ণপদক প্রাপ্ত রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভা ডোপিং/মাদক সেবন করে ট্র্যাকে নেমেছিলেন।

 

চার বছর পর ২০১৬ রিও অলিম্পিকের ৮০০ মিটার ইভেন্টে আবারো সোনা জেতেন কাস্টার সোমেনিয়া। তবে এবার তার পারফরম্যান্সে বিশ্ববাসী তাজ্জব বনে যায়। প্রতিযোগিতামূলক অ্যাথলেটিকসে যেখানে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে রেকর্ড ভাঙাচোড়া হয়, সেখানে আগের বিশ্ব রেকর্ড থেকে সাত সেকেন্ড সময় কম নিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড করেন সোমেনিয়া! তার এই অতি মানবীয় পারফরম্যান্স সাধারণ দর্শক তো বটেই খোদ অ্যাথলেটদের মনেও প্রশ্ন তোলে, সোমেনিয়া নারী নাকি পুরুষ?

 

সোমেনিয়াকে নিয়ে এ বিতর্ক ২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত কোর্ট অফ আরবিট্রেশন স্পোর্টসে (সিএএস) পৌঁছায়। সেই আদালতের দেয়া ১৬৫ পৃষ্ঠার রায়ে দেখা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকদের মতে ইন্টারসেক্স অ্যাথলেটদের ৪০০, ৮০০ ও ১ হাজার ৫০০ মিটার ইভেন্টে অংশ নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে সিএএসের দেয়া এই রায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে। অনেকের মতেই এটি মানবাধিকারের এটি স্পষ্ট লঙ্ঘন ও বর্ণ বৈষম্য উদ্রেককারী।

 

 

সর্বোচ্চ তার গতি

 

অন্যদিকে, প্রাক্তন ব্রিটিশ নারী ম্যারথন দৌড়বিদ পাওলা র‍্যাডক্লিফ মন্তব্য করেন, বেশি টেস্টোস্টেরনযুক্ত নারীদের যদি সুযোগ দেয়ার রীতি চলতে থাকে তবে পরবর্তী  প্রজন্মে আর কোনো নারী অ্যাথলেট থাকবে না!

 

পুলিতজার পুরস্কার বিজয়ী নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক জিনা কোল্টার তার একটি গবেষণাতে দেখান যে, উচ্চ মাত্রায় টেস্টোস্টেরন আছে এমন মহিলারা অলিম্পিক ও ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ থেকে ১৫০০ মিটারের প্রতিযোগিতায় ৩০টি পদক ছিনিয়ে নিয়েছেন। তার অভিযোগ, যেখানে প্রতি বিশ হাজার নারীর মধ্যে মাত্র একজনের রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি থাকে, সেখানে তারাই যদি ক্রীড়া ইভেন্ট গুলোতে রাজত্ব করে তবে সাধারণ নারীরা অ্যাথলেটিক্সের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেবে। ‌

 

২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সেবাস্টিয়ান কো ঘোষণা দেন, যেসকল নারীর দেহে টেস্টোস্টেরণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি, তারা হয় সেই মাত্রা কমাবে, নয়তো পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে।

 

কিন্তু আসলেই কি কাস্টার সোমেনিয়া পুরুষদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন? পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, রিও অলিম্পিকে পুরুষদের হিটে যে সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে কোয়ালিফাই করেছে, তার তুলনায় নারীদের বিশ্বরেকর্ড ধারী সোমেনিয়ার টাইমিং তিন সেকেন্ড বেশি! সোমেনিয়া ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের কিছু বেশি সময় নিয়ে নারীদের আগের বিশ্বরেকর্ডকে ৭ সেকেন্ড পেছনে ফেলেছিলেন।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আর্কাইভ

August 2019
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  

Weather

booked.net




© All Rights Reserved – 2019-2021
Design BY positiveit.us
usbdnews24