নির্বিষ বোলিং, বাজে গ্রাউন্ডস ফিল্ডিং, ক্যাচ মিস- বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের ব্যাখ্যায় অবধারিতভাবে আসবে এই তিনটি কারণ। বাজে শট নির্বাচন, নড়বড়ে আত্মবিশ্বাস, অনর্থক রান আউট; ব্যাটিং ইনিংসের ব্যাখ্যা হবে একরম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে হারের কারণ আর কী হতে পারে!
শুরুর বাজে বোলিংয়ের পরও শেষ দিকে ফিরে এসেছিল বাংলাদেশ। কুশল পেরেরার সেঞ্চুরিতে ৩১৪ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। লক্ষ্য নাগালে পেলেও ব্যাটসম্যানদের শুরুর ব্যাটিং ছিল ছন্নছাড়া। চেষ্টা করেছিলেন সাব্বির, মুশফিক। কিন্তু তাদের লড়াই যথেষ্ট ছিল না। ৪১.৪ ওভারে ২২৩ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস।
প্রেমাদাসায় প্রথম ওয়ানডেতে তিন বিভাগেই ফ্লপ বাংলাদেশ। এমন বাজে দিনে ম্যাচ জয়ের চিন্তা করাও তো বোকামি। তাইতো নিজেদের পারফেক্ট দিনে বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলায় মেতেছিল লঙ্কানরা। ৯১ রানের জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
মঞ্চটা লাসিথ মালিঙ্গার জন্য প্রস্তুত ছিল। ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। নিজের মঞ্চ নিজেই রাঙালেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি। ব্যাটিংয়ে ৬ বলে ৬ রানের পর আগুন ঝরা বোলিং। তামিমকে ইনিংসের শুরুতে টো এন্ডে যে ইয়র্কার করেছিলেন তাতে কিছু করার ছিল না। সৌম্য চোখে চোখ রেখে লড়াই করলেও শেষ বাজিতে জিতেছেন মালিঙ্গা। রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে বাড়তি গতির সঙ্গে সুইং। বল মিস করে সৌম্য বোল্ড। জিতলেন মালিঙ্গা।
বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটিও ঠুকে দেন এই পেসার। মুস্তাফিজুর রহমান তুলে মারতে গিয়ে রাতের আকাশে বল তোলেন। পেরেরার নির্ভরযোগ্য হাতের সুবাদে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে তৃতীয় উইকেটের স্বাদ পান ওয়ানডে ক্রিকেটে একমাত্র বোলার হিসেবে তিনটি হ্যাটট্রিকের মালিক মালিঙ্গা। ৯.৪ ওভারে ২ মেডেনে ৩৮ রানে ৩ উইকেট। শেষ ওয়ানডেতেও তার এমন পারফরম্যান্স বলে দেয় স্বর্ণসময়ে তিনি ছিলেন আরো ভয়ংকর।
মালিঙ্গার ইয়র্কারে ক্যারিয়ারের ১৮তম ডাক হজম করেন তামিম। তার ফেরার পর সৌম্য ও মিথুন চেষ্টা করেছিলেন ধাক্কা সামলে নেওয়ার। কিন্তু পারেননি। স্লগ খেলতে গিয়ে মিথুন এলবিডব্লিউ হন ১০ রানে। সৌম্য মালিঙ্গার বলে বোল্ড হন ১৫ রানে। সাকিব না থাকায় দায়িত্ব বেড়েছিল মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর। মুশফিক পারলেও মাহমুদউল্লাহ পারেননি। কুমারার শর্ট বল তুলে মারতে গিয়ে থার্ডম্যান অঞ্চলে ক্যাচ দেন মাত্র ৩ রানে।
৩৯ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের। সেখান থেকে সাব্বির ও মুশফিকের নতুন লড়াই শুরু। মুশফিক ছিলেন আনকোর রোলে। সাব্বির দেখান আগ্রাসন। ৪২ বলে তোলেন ফিফটি, যেখানে চারের মার ছিল ৭টি। মুশফিক হাফ সেঞ্চুরি পান ৬১ বলে। দুজনের ১১১ রানের জুটিতে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ অন্তত শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালাবে। কিন্তু সবকিছু এলোমেলো করে দেন সাব্বির। দারুণ সব ড্রাইভ, পুল আর হুক শটে সাজানো ইনিংসটির ইতি টানেন বাজে শটে। ধনাঞ্জয়াকে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ৬০ রানে।
মোসাদ্দেক ও মুশফিকের জুটি কাটা পড়ে বাজে রান আউটে। লেগ সাইডে ওয়াইড বলে মোসাদ্দেক রান নেওয়ার জন্য দৌড় দিয়েছিলেন। মুশফিক শুরুতে সাড়া দিয়েও মাঝপথে থেমে যান। ততক্ষণে অর্ধেক ক্রিজে মোসাদ্দেক। গ্লাভস খুলে বল থ্রো করে উইকেট ভাঙেন মেন্ডিস। ওখানেই শেষ বাংলাদেশ। আর মুশফিক ৬৭ রানে আউট হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার জয় ছিল হাতের মুঠোয়। শেষ দিকে ম্যাচটা টেস্ট ম্যাচই বানিয়ে ফেলেছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক। তিন স্লিপের সঙ্গে গালি। থার্ডম্যানেও নেই কোনো ফিল্ডার। বিশাল পুঁজি নিয়ে স্বাগতিকরা বাংলাদেশকে এমন লজ্জা দেবে, তা কি ভাবতেও পেরেছিলেন তামিমরা!
প্রতিপক্ষের থেকেও বাংলাদেশের ‘বড় শত্রু’ এখন নতুন বল আর টস। বিশ্বকাপে নয় ম্যাচের আটটিতে টস হারের পর শুক্রবার প্রেমাদাসায়ও টস জেতেনি বাংলাদেশ। আর নতুন বলে আবার নির্বিষ আক্রমণ। তবুও ২১ মাস পর দলে ফিরে শফিউল ইসলাম আশার আলো দেখিয়েছিলেন আভিসকা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে। ডানহাতি ব্যাটসম্যান শরীরের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্লিপে সৌম্যর হাতে।
এরপর পুরোনো বাংলাদেশ। ক্রিজে নেমে কুশল পেরেরা পাল্টে দেন পুরো দলের ব্যাটিং চিত্র। তাকে সঙ্গ দেন অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। ৪ ওভারে শ্রীলঙ্কার রান ছিল মাত্র ১৩। প্রথম পাওয়ার প্লে’র বাকি ৬ ওভারে স্বাগতিকরা তোলে ৬৩ রান। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে রান ১ উইকেটে ৭৭।
রুবেল হোসেনকে সপ্তম ওভারে পরপর দুই চার মেরে আক্রমণে যাওয়া শুরু পেরেরার। মিরাজ অষ্টম ওভারে হজম করেন জোড়া বাউন্ডারি। সপ্তম ওভারের ভুল নবম ওভারেও করেন রুবেল। আবার দুই বাউন্ডারি ডানহাতি পেসারের ওভারে। বারবার শর্ট বল করে পেরেরার হাতে মার খাচ্ছিলেন। তবুও ভুল থেকে শিখছিলেন না। প্রথম ২ ওভারে রুবেল খরচ করেন ২৪ রান। বারবার লাইন ও লেংথ মিস করা অন্য বোলাররাও ছিলেন না ছন্দে। ফলে নিয়মিত বিরতিতে আসছিল বাউন্ডারি। অধিনায়কের মাথায় চিন্তার ভাঁজ।
Leave a Reply