ঢাকার আকাশ আজ সকাল থেকে মেঘলা। একই সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। শুক্রবার এই সময়টাতে ছুটির আলস্য বিলাসে কর্মজীবী অনেকেই ঘরে থাকেন। বাস টার্মিনাল বা টিকিট কাউন্টারে তেমন ভিড় থাকে না।
কিন্তু কল্যাণপুরের বাস কাউন্টারগুলোর সামনের দৃশ্য একেবারে অন্যরকম। কারণ আজ থেকে কোরবানির ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। তাই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন টিকিটপ্রত্যাশী বহু মানুষ। ধীরে ধীরে তাঁরা কাউন্টারের ভেতরে যাচ্ছেন। বেরিয়ে আসছেন হাসি মুখে।
এঁদের মধ্যে শেখ নাহিদ হাসান নামের এক যুবক তাঁর হাতে থাকা ছোট্ট একটি কাগজ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছিলেন। কাছে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখছি—৮ আগস্টের বিকেলের টিকিট পেলাম কি না।’
টিকিট নিয়ে কোনো সংশয়ের কারণ কী?
এ প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে এবার টানা নয় দিনের ছুটি পড়েছে। ৮ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত অফিস করে বিকেলের বাসে রওনা হব। বিকেলের টিকিট পেয়েছি কি না, সেটিই ভালো করে দেখছি।’
নাহিদের পাশে থাকা কামাল হোসেন নামে আরেক যুবক জানালেন, তিনি যশোর যাবেন। কিন্তু ভাড়া দিতে হবে সাতক্ষীরা পর্যন্ত। ৮ আগস্ট বিকেলের টিকিটের জন্য এসপি গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারে এসেছেন। কিন্তু বিকেলের টিকিট সব বিক্রি হয়ে গেছে। তাই ওই দিন রাতের টিকিট কিনতে হয়েছে।
নাহিদ ও কামালের মতো টিকিটপ্রত্যাশীরা ছুটি হিসেব কষেই কাউন্টারগুলোতে আজ হাজির হয়েছেন। তাঁরা জানান, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের সম্ভাব্য দিন ১২ আগস্ট। সাপ্তাহিক ৯ ও ১০ আগস্ট শুক্র-শনিবার দুটি সাপ্তাহিক ছুটি। এর পর ১১ থেকে ১৩ আগস্ট রবি, সোম ও মঙ্গলবার ঈদের তিন দিনের ছুটি। ১৪ আগস্ট বুধবার অফিস খোলা থাকলেও অনেকেই ঐচ্ছিক ছুটি নিচ্ছেন। চাঁদের ওঠার কারণে ঈদ একদিন পিছিয়ে গেলে বুধবার ঐচ্ছিক ছুটি নেওয়ার প্রয়োজনও পড়বে না। বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি। ১৬ ও ১৭ আগস্ট শুক্র ও শনিবার আবারও সাপ্তাহিক। টানা নয় দিনের ছুটি উপভোগ করতে ঘরমুখো মানুষ আগেভাগে রাজধানী ছাড়বেন। তাঁরা ফিরবেনও ধীরেসুস্থে।
নয় দিনের লম্বা ছুটিতে অনেকে আবার ধীরেসুস্থে বাড়ি ফিরবেন। তাই বাস মালিকেরাও খানিকটা স্বস্তিতে। এসপি গোল্ডেন লাইনের স্বত্বাধিকারী জুনায়েদ হোসেন লস্কর প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের টিকিটের জন্য ৭ আগস্ট রাতের বেলা যাত্রীদের চাহিদা রয়েছে। তবে ৮ আগস্ট দুপুরে টিকিটের চাহিদা বেশি। ৯ আগস্টও একই অবস্থা। তবে ১০ আগস্টে তুলনামূলক কম রয়েছে।
তবে যাত্রাপথের চিন্তায় কপালে ভাঁজ রয়েছে জুনায়েদ হোসেনের। তিনি বলেন, পুরো বর্ষার সময় এবারের ঈদের ছুটি পড়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফেরিঘাটের অবস্থা ভালো নয়। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ফেরিতে বাস পারাপারে সময় বেশি লাগছে। এই অবস্থা এখনো কাটেনি। ঈদের সময় কোরবানির পশুবাহী ট্রাকও পারাপার হবে। তাই বাড়তি ট্রিপ দেওয়া হবে না।
কল্যাণপুরের মতো শ্যামলী, গাবতলী, আসাদগেটের বাস কাউন্টারগুলোয় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোর থেকে টিকিটপ্রত্যাশীরা ভিড় করেছেন। তাঁরা বলেন, ঈদের আগাম টিকিট আজ দেওয়া হলেও ১ আগস্ট থেকে টিকিটের বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এসি বাসের টিকিট মূল্য লাগামহীন। ১০০০ টাকার এসি বাসের টিকিট ১৩৫০ টাকা, ১২০০ টাকার টিকিট ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গাবতলীতে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, সারা বছর বাসের টিকিট ছাড় দিয়ে কম মূল্যে বিক্রি করা হয়। ঈদের সময় বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া রাখা হয়।
এসি বাসের টিকিটের ভাড়া বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাস মালিকেরা জানান, বিভিন্ন ব্রান্ডের এসি বাস আনা হয়। এগুলো দামের পার্থক্য রয়েছে। তাই টিকিটের দামেও পার্থক্য থাকে।
Leave a Reply