সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৮ অপরাহ্ন

নোটিশ :
Welcome To Our Website...
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংলাপ অসম্ভব নয়

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংলাপ অসম্ভব নয়

ইরান জানিয়েছে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তিতে নির্ধারিত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের উৎপাদন সীমা সে অতিক্রম করেছে। এই উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়াতে ইরানের সামনে কোনো বাঁধা নেই। তবে ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা যদি তুলে নেওয়া হয়, তাহলে ইরান চুক্তিতে নির্ধারিত স্তরে তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন সীমিত রাখবে।

 

অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতি এখন মারাত্মক সংকটের সম্মুখীন। এই অবস্থায় মরিয়া হয়েই সে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের সীমা অতিক্রম করেছে। দেশটির লক্ষ্য পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন নয়, যুক্তরাষ্ট্রের তর্জনী উপেক্ষা করে ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভেদ জারিফ এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, কোনো সিদ্ধান্তই অপরিবর্তনীয় নয়। ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের প্রস্তাব মেনে নিলে ইরান আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবে।

 

ইরান পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গ করেছে, এ কথা জেনে ট্রাম্প বলেছেন, সাবধান ইরান! পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, এর ফলে ইরান একা হয়ে পড়বে এবং তার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

 

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যত তর্জন-গর্জন করা হোক না কেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মুহূর্তে কোনো রকম যুদ্ধে জড়াতে চান না। নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি সব রকম সামরিক তৎপরতার বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও সে অবস্থানের কোনো নাটকীয় পরিবর্তন হয়নি। মুখে অবশ্য উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া ও ইরানকে ধূলিসাৎ করার হুমকি দিয়েছেন। অনেকের ধারণা এটি ট্রাম্পের একটি কৌশল মাত্র। তিনি এদের প্রত্যেকের সঙ্গেই সংলাপে আগ্রহী, সেই সংলাপ শুরু আগে নিজের অবস্থান সংহত করতেই এমন তর্জন-গর্জন।

 

ট্রাম্প নিজে জানিয়েছেন, কোনো রকম শর্ত ছাড়াই তিনি ইরানের সঙ্গে সংলাপে বসতে আগ্রহী। ওয়েব পত্রিকা পলিটিকো ট্রাম্প প্রশাসনের সূত্র উদ্ধৃত করে বলেছে, হোয়াইট হাউস তিনটি জিনিস চায়: ইরান যাতে পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন না করে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইউরোপ ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখুক; ইরানকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার লক্ষ্য ইউরোপ যে প্রক্রিয়া গঠনের কথা ঘোষণা করেছে তা সফল হোক এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি ইরানকে কোনো বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত রাখুক।

 

হোয়াইট হাউস আরও একটা জিনিস চায়, তা হলো ট্রাম্পের শর্ত মেনে ইরান সংলাপে ফিরে আসুক। ট্রাম্প নিজেকে সেরা ‘ডিল মেকার’ হিসেবে পরিচিত করাতে ভালোবাসেন। প্রথমে গরম-পরে নরম এই কৌশলটি তিনি নিজের ব্যবসায়িক জীবনে অনেকবার প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে তা কাজে লেগেছে। তিনি আশা করছেন ইরানের ক্ষেত্রেও তা কাজে লাগবে।

 

প্রশ্ন হলো, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে যা সম্ভব হয়েছে, ইরানের ক্ষেত্রেও কি তা সম্ভব?

 

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সুজান মেলোনি বলেছেন, আসলে ইরান পরীক্ষা করে দেখছে তার গৃহীত পদক্ষেপের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো ঠিক কী করে। তিনি অবশ্য মনে করেন, ইরানের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার মডেল কাজে লাগবে বলে মনে হয় না। উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যে একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন শেষ করেছে। ইরানের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। ইরানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কট্টর মার্কিন-বিরোধী মনোভাব। দেশের অধিকাংশ মানুষ তীব্র মার্কিন বিরোধী। ফলে তারা ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না।

 

এ কথার অর্থ এই নয় এই দুই দেশের মধ্যে সংলাপ অসম্ভব। ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, আমেরিকার হুমকিতে তাঁরা ভীত নন। “সবাই যাতে ইরানের মানুষের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথা বলে, আমরা তা নিশ্চিত করব।” এই কথার অর্থ ইরান সংলাপে আগ্রহী, তবে যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে তাকে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে না।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আর্কাইভ

Weather

booked.net




© All Rights Reserved – 2019-2021
Design BY positiveit.us
usbdnews24