চীনে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে গতকাল শনিবার দুপুরে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের সফরে দেশটির সঙ্গে আইসিটি, বিদ্যুৎ, পানিসম্পদসহ মোট ৯টি চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারক সই হয়েছে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে সহায়তা পাওয়ার প্রতিশ্রুতিও পেয়েছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের চীন সফরকে বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির ভরকেন্দ্র এখন এশিয়া এবং অতি অবশ্যই চীন। দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্ব সব সময় গুরুত্বপূর্ণ, তার সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক না করে ২০৪১ সালের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফর অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
আবুল বারকাত বলেন, চীন ভবিষ্যৎ অর্থনীতির প্রধান খেলোয়ার। ২০২৫ সালের পর দেশটি থেকে হালকা ইন্ডাস্ট্রি উঠিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে পাঠাবে। এই ইন্ডাস্ট্রি নিজের মাটিতে নিতে অনেক দেশ এখন তৎপর। এই জায়গাতে বাংলাদেশকে অবশ্যই সুবিধা নিতে হবে।
চীনের মধ্যবিত্ত বাজার দখলের কথা উল্লেখ করে জনতা ব্যাংকের সাবেক এই প্রধান বলেন, চীনে মধ্যবিত্তের বড় একটি বাজার রয়েছে। সেখানে চেষ্টা করলে বাংলাদেশ বড় অংকে ব্যবসা করতে পারে। এছাড়া চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে চীন যে কৌশল অবলম্বন করছে সেখান থেকেও শেখার রয়েছে।
ভারত মহাসাগর কেন্দ্রিক চীনের অর্থনৈতিক বলয়ের দিকে ইঙ্গিত করে সেখান থেকে সুবিধা নেয়ার জন্যও বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছেন আবুল বারকাত।
চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার কথাও বলেন আবুল বারকাত। তিনি বলেন, সবার আগে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখতে হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস ও পারস্পরিক সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে যেন সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেটি নজরে রাখতে হবে। নাহলে কূটনীতির দুনিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে এটি সুফল বয়ে আনবে না।
এবারের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারকে বোঝানোর বিষয়ে বেইজিং ঢাকাকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেয়।
এছাড়া দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) মিনিস্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সং তায়ো’ও রোহিঙ্গা সমস্যাটি সমাধানের বিষয়ে মিয়ানমার প্রধান অং সান সুচি এবং অন্যান্য নেতার সঙ্গে তার দলের আলোচনার বিষয়ে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের বর্তমান এই অবস্থানকে বাংলাদেশের বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান।
Leave a Reply