আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অব্যাহত নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে মাঠে নামেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে শুরু করেন ট্রেন মার্চ।
দিনটি ছিল ২৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার ১৯৯৪ সাল। সকালে রূপসা এক্সপ্রেসে খুলনা থেকে নীলফামারীর সৈয়দপুরের উদ্দেশে ট্রেন মার্চ শুরু করেন তিনি। মাঝপথে ১১টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি ও পথসভা করেন।
বিকেলে পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশনে পূর্বনির্ধারিত পথসভা ছিল। ওই নির্ধারিত কর্মসূচি সফল করা ও নেত্রীকে স্বাগত জানাতে পাবনা ছাড়াও নাটোর ও রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঈশ্বরদীতে জড়ো হতে থাকেন দুপুর থেকে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা হাজির হন ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রীর ঈশ্বরদীর জনসভাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন থানা বিএনপির তৎকালীন নেতা-কর্মীরা। স্টেশনের প্লাটফরম ও আশপাশে চলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের স্লোগান-পাল্টা স্লোগান। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে শেখ হাসিনাকে বহনকারী রূপসা এক্সপ্রেস স্টেশনে প্রবেশের মুহূর্তে শুরু হয় ট্রেন লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা হামলা।
শেখ হাসিনা ট্রেনের যে কামরায় অবস্থান করছিলেন সেটিতে গুলি ও বোমার আঘাত লাগে। কিন্তু শেখ হাসিনা অক্ষত থাকেন। এ সময় স্টেশনে অবস্থান নেয়া আওয়ামী লীগের নিরস্ত্র নেতা-কর্মীরা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। গুলি ও বোমার শব্দে আতঙ্কিত ট্রেনের যাত্রীরা জীবন বাঁচাতে ট্রেন থেকে নেমে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
শেখ হাসিনা কিন্তু স্থির ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ট্রেনে অপেক্ষা করেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মীদের নিষেধ ও বাধা উপেক্ষা করে কামরার দরজায় দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে বক্তৃতা করেন।
রেলস্টেশনে কড়া পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে উপস্থিত কয়েক হাজার মানুষের উদ্দেশে শেখ হাসিনার বক্তৃতার সময় আবারো বোমা বিস্ফোরিত হয়। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই হামলার মাধ্যমে সরকার তার পতনের বীজ রোপণ করল, এই মুহূর্ত থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকারকে উৎখাত করে সন্ত্রাসী হামলার জবাব দেয়া হবে।’
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর ট্রেনযাত্রায় সফরসঙ্গী আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপের সময় জানা যায়, সেদিন ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে রূপসা এক্সপ্রেসে গুলি ও বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধুকন্যা। পরে স্টেশনে অপেক্ষমাণ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতায় এ হামলার জন্য তৎকালীন সরকারি দল বিএনপিকে দায়ী করেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Leave a Reply