আপনি কাজ করেন, ঠিক আছে। আপনি স্বপ্ন দেখেন, ঠিক আছে। কিন্তু আপনি কি আত্মমূল্যায়ন করেন? কেবলমাত্র স্বপ্ন দেখলে বা কাজ করলেই যে আপনি সঠিক ট্র্যাকে আছেন তা প্রমাণিত হয় না। সফল হতে হলে নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে। আপনার আত্মমূল্যায়ন আপনাকে ভুল-ভ্রান্তি এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে। এজন্য প্রথমে নিজেকে প্রশ্ন করতে হয়। চলুন জেনে নেই সেই প্রশ্নগুলো।
কীভাবে আমাকে অন্যরা ভিন্নভাবে দেখে?
আপনি কি কখনো নিজের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করে শুনেছেন? যেহেতু কণ্ঠস্বর মানুষের খুলির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে, তাই অন্যরা যেভাবে আমাদের শুনে থাকে, আমরা নিজেদের সেভাবে শুনি না। কথাটি আমাদের আচরণের ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা কীভাবে চিন্তা করছি তার ওপর ভিত্তি করে আমাদের আচরণে হস্তক্ষেপ করি। অন্যরা আপনাকে কীভাবে দেখে- এটি জানার চমৎকার উপায় হলো ৩৬০ অ্যাসেসমেন্ট। এর মাধ্যমে অজ্ঞাত, গঠনমূলক ও নির্ভুল ফিডব্যাক পাওয়া যায়। যদি আপনি ৩৬০ অ্যাসেসমেন্টের মধ্য দিয়ে যেতে চান, তাহলে প্রাসঙ্গিক ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন করুন। বড় প্রশ্ন ও প্রশ্নের সরলীকরণ এড়িয়ে চলুন। উদাহরণস্বরূপ, যখন মিটিংয়ে সবাই আমার সঙ্গে দ্বিমত করেছিল তখন আমি কি নিজেকে ভালোভাবে সামলেছি? অথবা, আমি কি ভালো বস? নিশ্চিত হোন, ফিডব্যাকের সময় আপনি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখাননি এবং অন্যের মতও বিবেচনা করছেন। আপনি যদি রেগে যান অথবা আত্মরক্ষা করেন, তাহলে তাদের কাছ থেকে সঠিক ফিডব্যাক পাবেন না অথবা তারা মতামত জানাবেন না।
আজ তুলনামূলক ভালো কী করেছি?
নিজেকে প্রশ্ন করুন- আজকের কাজটি পূর্বের তুলনায় ভালো হয়েছে কিনা? নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ও সফল করতে হলে কাজের উত্তরোত্তর উন্নয়ন প্রয়োজন। যেকোনো উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য দিনশেষে কাজের মূল্যায়ন জরুরি। কাজটি কেমন হয়েছে? এটি কি পূর্বের মান অতিক্রম করেছে? আজকে সবচেয়ে ভালোভাবে কী করেছি? নিজেকে প্রশ্ন করে জেনে নিন।
আমি কি নিজের কাজ গুরুত্ব দিচ্ছি?
আপনি কি কোনো কারণে আপনার কাজকে অবহেলা করছেন? মনের মতো চাকরি হয়নি বলে মন খারাপ? ইদানিং পরিবারকে বেশি সময় দেয়ার কারণে কি কর্মক্ষেত্রে যেতে দেরি হচ্ছে? কারণ যাই হোক, নিজের কাজকে কখনো অবহেলা করতে নেই। কোনো কাজের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে অথবা অধিকতর ভালো পদে যেতে অথবা সমালোচনা বন্ধ করতে অথবা সফলতার পথ মসৃণ করতে কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। দিনশেষে নিজেকে প্রশ্ন করুন- কোনো কারণে আপনার কাজ অবহেলিত হয়েছে কিনা?
লক্ষ্য অর্জিত হলে আমি কেমন অনুভব করব?
সফলতার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত সন্তুষ্ট না হওয়া। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, আপনার সকল লক্ষ্য পূরণ হলে আপনি কেমন অনুভব করবেন তা নিয়ে ভাবা যাবে না। বরং এ ধরনের ভাবনা আপনাকে প্রণোদনা দেবে। ফলে কাজে গতি আসবে, কাজের প্রতি উৎসাহ বহুগুণ বেড়ে যাবে, কাজকে অবহেলা করার প্রবণতা কমে যাবে ও সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আপনি কাজের পাশাপাশি এটাও চিন্তা করুন- সফল হলে আপনার অনুভূতি উদযাপনের জন্য কী করবেন।
আজ কি জ্ঞানার্জন করেছি?
জ্ঞানের কোনো শেষ নেই। প্রতিদিন জ্ঞানভাণ্ডারে নতুন নতুন জ্ঞান যুক্ত হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের একটি তত্ত্ব ছিল, এক সময় বিশ্বের জ্ঞান দ্বিগুণ হতে ১,৫০০ বছর সময় লাগত। কিন্তু বর্তমানে এক বা দু’বছরেই বিশ্বের জ্ঞান দ্বিগুণ হয়ে যায়। সফল হতে হলে অবশ্যই সাম্প্রতিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি মৌলিক জ্ঞানও আহরণ করতে হবে। প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা কোনো বিষয়ের ওপর লিখিত বই পড়ুন। প্রতিনিয়ত জ্ঞানচর্চা স্মৃতিশক্তি অটুট রাখতে পারে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। পিছিয়ে পড়তে না চাইলে প্রতিদিন জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই।
আমি কিসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছি?
প্রত্যেক মানুষই চায় জীবনে ভালো কিছু হোক। আপনিও এর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু আপনি যে চাকরি করছেন তা কি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করবে? আপনার চাকরি আপনাকে কতদূর নিয়ে যাবে? স্বল্প বেতনের চাকরিতে প্রমোশনের সুযোগ না থাকলে স্থায়ী হবেন কিনা পুনরায় ভাবুন। আপনার জীবনের অন্যান্য দিক সম্পর্কেও সচেতন থাকুন। এমন কিছু করবেন না যা আপনার জীবনে দাগ ফেলবে। মনে রাখবেন, জীবনের দাগ ওঠানো কঠিন। কোনো অসামাজিক বা ধর্মবিরোধী কার্যকলাপে জড়াবেন না। যদি আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান সে বিষয়ে প্রশ্ন না করেন, তাহলে ভবিষ্যতে অনুতপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
আগামী পাঁচ বছরে আমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাই?
যদি আপনি গন্তব্য ঠিক না করেন, তাহলে যেকোনো পথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গন্তব্য ঠিক করা থাকলে বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। আগামী পাঁচ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান ভাবুন। পাঁচ বছর হলো পারফেক্ট টাইমফ্রেম। এটি খুব দীর্ঘসময় নয়, আবার অল্প সময়ও নয়। সদিচ্ছা ও লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থাকলে এ সময়ের মধ্যে কোনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব।
আমি কি ভয় পাচ্ছি?
অস্তিত্ব রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে ভয়ের গুরুত্ব রয়েছে। এটি সেসব বিষয়ে সতর্ক থাক
Leave a Reply