ইদানিং ঘরে গাছ রাখার জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। বিষয়টা হয়তো আপনি নিজেই বুঝতে পেরেছেন, কারণ আপনার বেশিরভাগ বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের বাসায় নয়ন জুড়ানো ঘরোয়া গাছ দেখেছেন। ঘরে বা অফিসে বা আবদ্ধ স্থানে যেসব গাছ লাগানো হয় তাদেরকে ইংরেজিতে ইনডোর প্লান্ট বা হাউজপ্লান্ট বলে।
ইনডোর প্লান্ট কেবলমাত্র ঘরেরই সৌন্দর্যই বাড়ায় না, এরা স্বাস্থ্যের নানা উপকারও করে। মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে আপনার ঘরে গাছ লাগানোর কথা বিবেচনা করতে পারেন। সহজে শ্বাস নিতে চান? ঘরের বায়ুকে বিশুদ্ধ করতে চান? কাজে বা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে চান? মানসিক চাপের লাগাম টেনে ধরতে চান? প্রশান্তি অনুভব করতে চান? অসুস্থতা থেকে দ্রুত আরোগ্যলাভ করতে চান? তাহলে অতি শিগগির ইনডোর প্লান্ট কেনার কথা ভাবুন। এখানে ঘরে গাছ লাগানোর ৮ উপকারিতা আলোচনা করা হলো।
* বায়ু বিশুদ্ধ করে
গবেষণায় পাওয়া যায়, ইনডোর প্লান্ট বায়ু থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ ও ইনডোর পলুট্যান্ট (যেমন- ফরমালডিহাইড ও বেনজিন) দূর করে। প্রকৃতপক্ষে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোমিলিয়াড প্লান্ট ১২ ঘণ্টার মধ্যে ছয়টি ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডের ৮০ শতাংশেরও বেশি দূর করতে পারে, অন্যদিকে ড্রাসিনা প্লান্ট ৯৪ শতাংশেরও বেশি অ্যাসিটোন (নেইল পলিশ রিমুভারে বিদ্যমান পানজেন্ট কম্পাউন্ড) দূর করতে পারে। রুটগার্সের অন্তর্গত হর্টিকালচার থেরাপি প্রোগ্রামের সহকারী পরিচালক গ্যারি এল. আল্টমান বলেন, ‘ইনডোর প্লান্টের বায়ু বিশুদ্ধকরণ ক্ষমতা নির্ভর করে উদ্ভিদের আকার, ইনডোর স্পেস বা আবদ্ধ স্থানের আকার ও বায়ুতে টক্সিনের পরিমাণের ওপর। ৬-৮টি মাঝারি থেকে বড় আকারের ইনডোর প্লান্ট একটি বড় কক্ষের বায়ুর মানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে যথেষ্ট। হাউজপ্লান্টের পারফরম্যান্স উন্নত রাখতে পাতাগুলো পরিষ্কার রাখুন ও ধূলিমুক্ত করুন এবং মাঝেমধ্যে তাদেরকে বাইরে সূর্যের নিচে নিয়ে আসুন, যেন তারা রিচার্জ হতে পারে বা প্রাণশক্তি পেতে পারে।’
* কক্ষকে স্বস্তিকর করে
ইনডোর প্লান্ট কেবলমাত্র আপনার কক্ষকে বর্ণালী ও প্রাণবন্তই করে না, এগুলো পরিবেশগত পরিবর্তন এনে কক্ষকে স্বস্তিকরও করে তোলে। আল্টমান বলেন, ‘কক্ষের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি করতে, কোলাহল কমাতে, অনাকর্ষণীয় স্থানকে আকর্ষণীয় করতে ও কক্ষের তাপমাত্রা পরিমিত করতে ইনডোর প্লান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।’ আপনার কক্ষকে আসবাবপত্র ও অন্যান্য অনুষঙ্গ দিয়ে সাজানোর পূর্বে এটা ভাবুন যে কিভাবে কক্ষটিতে ঘরোয়া গাছ লাগিয়ে স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।
* মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি করে
ইনডোর প্লান্ট আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের বিস্ময়কর উপকার করতে পারে। একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, নরওয়ের একটি হৃদপিণ্ড ও ফুসফুস পুনর্বাসন কেন্দ্রের কমন স্থানে ২৮টি নতুন গাছ লাগানোর চার সপ্তাহ পর রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু সেসব রোগীদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি যাদেরকে সবুজায়ন দেখানো হয়নি। নিউ ইয়র্ক বোটানিক্যাল গার্ডেনের হর্টিকালচার থেরাপি ইন্সট্রাকটর এবং উইলোউড আরবোরিটামের হর্টিকালচারের সুপারইন্টেন্ডেন্ট জন বিয়ার্নি বলেন, ‘আমরা পৃথিবীতে গাছপালায় ঘেরা পরিবেশ বা সবুজের মধ্যে বেড়ে উঠি। তাই এটা কোনো বিস্ময় নয় যে গাছপালা আমাদেরকে স্বস্তি দেয়। পৃথিবীতে মানুষের আগমন থেকেই তারা আমাদের শরীর ও আত্মা উভয়কেই খাওয়াচ্ছে।’
* অর্জনের অনুভূতি দেয়
একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব লোকদেরকে অ্যাসিস্টেড-লিভিং ফ্যাসিলিটি হিসেবে ইনডোর প্লান্টের যোগান দেয়া হয়েছিল এবং সেইসাথে কিভাবে এসব গাছের যত্ন নিতে হয় তা শেখানো হয়েছিল তাদের জীবনের মান বৃদ্ধি পেয়েছিল। গবেষকদের মতে এর কারণ হলো তারা কিছু অর্জনের অনুভূতি অনুভব করেছিল অথবা এসব গাছ পেয়ে তাদের একাকীত্ব ঘুচেছিল (কিছু লোক গাছপালার যত্ন নিতে নিতে কথা বলে অথবা গান গায়)। এনওয়াইইউ ল্যানগোনের অন্তর্গত রাস্ক রিহ্যাবিলিটেশনের হর্টিকালচার থেরাপির ম্যানেজার গোয়েন ফ্রায়েড বলেন, ‘কেউ কোনোকিছু শিখলে অর্জনের অনুভূতি অনুভব করে। গাছপালার যত্ন কিভাবে নিতে হয় তা শেখার ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- যখন কেউ গাছ লাগিয়ে এটির যত্ন নেন, তখন তিনি এক ধরনের আনন্দ অনুভব করেন।’ তাই জীবনের মান বাড়াতে গাছ লাগান ও এগুলোর যত্ন নেয়ার সময় গুনগুন করে পছন্দের গান গাইতে থাকুন- আপনার গলা যেমনই হোক, আপনার গাছ বিদ্রুপ করতে যাচ্ছে না!
* মানসিক চাপ বিস্মরণ করে
আল্টমান বলেন, ‘টবের গাছ বা ইনডোর প্লান্টের যত্ন নিলে মানসিক চাপ অথবা সমস্যাপূর্ণ বিষয় ভুলে থাকা সম্ভব হয়। এটি আমাদেরকে ভালো থাকতে সাহায্য করে এবং মনস্তাত্ত্বিক উপকারসাধন করে। নিয়মিত সঠিকভাবে ঘরোয়া গাছের যত্ন নিলে তারা ভালোভাবে বেড়ে ওঠে, যার ফলে তারা ঘরের বায়ু বিশুদ্ধ করে শারীরিক স্বাস্থ্যের উপকার করতে পারে।’ আপনি কি গার্ডেনিংয়ে নতুন? আপনার কক্ষের জানলা দিয়ে কি প্রচুর আলো প্রবেশ করে?
Leave a Reply