নিউইয়র্কে আসসাফা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস’র হজ্ব সেমিনারে হজ্ব সম্পাদনের সময় হাজীদের অহেতুক তাড়াহুড়া, সেলফি, টেলিফোন, রাগ-বিরাগ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গত ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারের ১৯২৪ ম্যাকগ্র এভিনিউর শাহজালাল দারুস সুন্নাহ জামে মসজিদে আয়োজিত হজ্ব সেমিনারে মূল বক্তব্যে আসসাফা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস’র প্রেসিডেন্ট হাফিজ ইবাদুর রহমান চৌধুরী এ আহ্বান জানান।
সেমিনারে কুরআন-হাদীসের আলোকে পবিত্র হজ্বের ফজিলত, বিধিবিধান ও হজ্ব পালনের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সেমিনারে বলা হয়, হজ্ব একাধারে দৈহিক, আর্থিক ও আত্মিক ইবাদত। সম্পদশালী, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার হজ্ব আদায় করা ফরজ। কবুল হজের একমাত্র পুরস্কার সুনিশ্চিত জান্নাত।
আসসাফা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস’র প্রেসিডেন্ট হাফিজ ইবাদুর রহমান চৌধুরীর পরিচালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাফেজ ওহী আহমদ চৌধুরী, আলহাজ্ব আব্দুল হাসিম হাসনু, আলহাজ্ব রেহানুজ্জাম রেহান প্রমুখ।
সেমিনারে বলা হয়, পবিত্র হজ্বের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভ সম্পর্কে আমাদের ধারণা সুস্পষ্ট ও পরিচ্ছন্ন হয়। হজ্ব মানে মহান প্রভূর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বশরীরে তাঁর দরবারে হাজির হয়ে কিছু মহা মূল্যবান স্মৃতি ও নিদর্শনের জেয়ারত করা। আল্লাহকে দেখা সম্ভব না হলেও আল্লাহর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে, তাঁর সে মহা মূল্যবান স্মৃতি ও নিদর্শন দেখে মহব্বতে নিজকে উজার করাই হলো হজ্ব।
সেমিনারে বলা হয়, নামাজ আদায় করা, রোজা রাখা, তাওয়াফ করা যেমন ইবাদত, তেমনি মহব্বতের সঙ্গে আল্লাহর ঘরের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকাও ইবাদত। হাজরে আসওয়াদকে চুম্বনের মধ্য দিয়ে হজ্ব শুরু এবং শেষ হয় বাইতুল্লাহর তাওয়াফের মধ্য দিয়ে। তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহিমের পাশে দাঁড়িয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা হজ্বের এক বিধান। জমজমের সুধা পান করে সিক্ত হন হাজিরা। মা হাজেরার পুণ্যস্মৃতি ছাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়, মক্কা থেকে মিনা, মিনা থেকে আরাফার অবস্থান, আবার আরাফা থেকে মুজদালিফা হয়ে মিনায় কঙ্কর নিক্ষেপ ও কোরবানি করে মক্কা ফিরে আসা হজ্বের কাজ। সব শেষে নবীজীর রওজা শরিফ জেয়ারত।
সেমিনারে উল্লেখ করা হয়, হজ্বের নিয়ত করার পর অবশ্য কর্তব্য হলো এই ইবাদতের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা। বায়তুল্লাহ অভিমুখে হজ্ব যাত্রা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পবিত্র সফর।
সেমিনারে ফরজ হজ আদায়ের নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান উল্লেখ করে হজ্ব সম্পাদনকারীদের জন্য নবীজীর সতর্ক বার্তাও উচ্চারণ করা হয়। সেমিনারে বলা হয়, নিবিষ্ট মনে আত্মিক ইবাদত হজ্ব পালন করতে হবে। হজ্ব সম্পাদনে কোন আদবের খেলাপ কিংবা বেআদবী হলে সোয়াবের পরিবর্তে গুনাহর ভাগিদার হতে হবে। ইদানিং দেখা যায়, হজ্ব পালন করতে গিয়ে অনেকে সেলফি, টেলিফোন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে নি:সন্দেহে হজ্ব সম্পাদনে আদবের খেলাপ হয়। এজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। হাজীদের হতে হবে সহনশীল, ধৈর্য্যশীল। রাগ একেবারেই পরিহার করতে হবে। হজ্ব পালনকালে যৌন সম্ভোগ, পরনিন্দা বা গীবত কিংবা ঝগড়া-প্যাছাদে লিপ্ত হলে হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে বলে সেমিনারে হুশিয়ার করা হয়।
সেমিনারে হজ্বযাত্রীদের ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট হস্তান্তর ছাড়াও আসসাফা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস’র পক্ষ থেকে ইহরামের কাপড়, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং হজ্ব ও ওমরাহ সহজ পদ্ধতি গাইডবুক সরবরাহ করা হয়। আলহাজ্ব সাখাওয়াত আলীর সৌজন্যে হাজীদের জায়নামাজ ও ব্যাগ প্রদান করা হয় হজ্বযাত্রীদের।
বক্তারা আসসাফা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস’র সুব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে তাদের হজ্জ্বব্রত পালনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
অনুষ্ঠানে হজ্বযাত্রী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মুসল্লী উপস্থিত ছিলেন। এসময় মুসলিম উম্মা, দেশ-প্রবাস ও বিশ্ব মানবতার শান্তি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
আসসাফা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস’র আয়োজনে এবার ৫০ জন হাজী হজ্জ্বব্রত পালন করবেন বলে জানা গেছে।
সেমিনারে আসসাফা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস’র প্রেসিডেন্ট হাফিজ ইবাদুর রহমান চৌধুরী জানান, প্রতি বছরের ন্যায় আগামী বছরও হজ্ব খরচ বাড়তে পারে। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানে আগামী বছরে হজ্ব গমেনিচ্ছুদের জন্য এখন বুকিংদাতাদের পূর্বের প্রাইসই দেয়া হবে। আগামী বছরে হজ্ব গমেনিচ্ছুদের হজ্ব বুকিং ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। হজ্ব সংক্রান্ত বিষয়ে যোগাযোগ : ইউএসএ : ৬৪৬-২৭০-৬৪৩৮ ও ৭১৮-৫৯৭-৬৪৩৮ এবং কেএসএ : ০৫০৮৪৭৫৯১৪। Email : assafatravel1@gmail.com
Leave a Reply