রংপুরে নিজ বাসভবন পল্লি নিবাসের লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ছয়টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এরশাদের দাফন সম্পন্ন হলো।
গত রোববার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় এরশাদের মৃত্যু হয়। এরপর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা এরশাদের কবর ঢাকার সামরিক কবরস্থানে দেওয়ার কথা জানান। তবে ওই দিন থেকেই রংপুরের জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা এরশাদের নিজ শহর রংপুরে দেওয়ার দাবি করতে থাকেন। রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান শুরু থেকেই এরশাদের দাফন রংপুরের করার বিষয়ে দাবি তুলতে থাকেন।
আজ দুপুর ১২টার পর রংপুর শহরের কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দানে চতুর্থ ও শেষ জানাজার জন্য এরশাদের মরদেহ আনা হয়। সেখানে লক্ষাধিক মানুষ জানাজা শরিক হয়। জানাজার মধ্যেই রংপুরে এরশাদের দাফনের দাবিতে হট্টগোল শুরু হয়।
গত রোববার বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রথম জানাজা হয়। গতকাল সোমবার এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা হয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়। এরপর বাদ আসর বায়তুল মোকররম জাতীয় মসজিদে তৃতীয় দফায় জানাজা হয়। আজ রংপুরের জানাজা শেষে ঢাকায় এরশাদের মরদেহ এনে দাফনের কথা ছিল।
কিন্তু আজ জানাজার আগে বক্তৃতায় মেয়র মোস্তাফিজ রংপুরে এরশাদের দাফনের দাবি আবারও তোলেন। এরপর জি এম কাদের বক্তব্য শুরু করেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের মাঝেই দাফনের বিষয়টি উল্লেখ করে স্লোগান শুরু হয়। বেলা ২টা ২৫মিনিটে এরশাদের জানাজা শুরু হয়। জানাজার পর শত শত কর্মী এরশাদের মরদেহ বহনকারী গাড়িটি ঘিরে ধরেন। তাঁরা রংপুরে কবর দেওয়ার দাবি জানান। গাড়িটিতে ছিলেন মেয়র মোস্তাফিজ। ময়দানে মাইক থেকে তাঁর প্রতি আহ্বান জানানো হয়, মরদেহ যেন রংপুর থেকে ঢাকায় না যায়। এ পরিস্থিতিতে বেলা তিনটার দিকে এরশাদের মরদেহ শহরে তাঁর বাড়ি পল্লি নিবাসে নেওয়া হয়। এরপর সেখানেই দাফন করার ঘোষণা দেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘এরশাদকে রংপুরে দাফন করার ব্যাপারে ঢাকায় যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁরা সম্মতি দিয়েছেন বলে আমি এ সিদ্ধান্তের কথা জানালাম।’
আজ জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরশাদের প্রতি রংপুরের গণমানুষের আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতাবোধে শ্রদ্ধা জানিয়ে এরশাদকে রংপুরেই দাফন করতে অনুমতি দিয়েছেন রওশন এরশাদ। এরশাদের কবরের পাশে রওশন এরশাদের জন্য কবরের জন্য জায়গা রাখতেও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
রওশন এরশাদ বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি রংপুরের গণমানুষের ভালোবাসা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তাদের আবেগ ও অনুরাগেই রংপুরে এরশাদকে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ দাফন কার্য পরিচালনা করেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। দাফনের সময় এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদেরসহ পরিবারের অন্য সদস্য, আত্মীয়-স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, দলীয় সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা। জাতীয় পার্টি ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাসদের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
Leave a Reply